মালদ্বীপের রাজধানী মালে। ছোট্ট এই দ্বীপ শহরের অলি-গলিতে বহু বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন। কাজের ফাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে তারা নিজেদের মধ্যে আড্ডা-আলোচনায় মেতে উঠেন। বর্তমানে তাদের আলোচনার অন্যতম বিষয় ঢাকা-মালের ফ্লাইট। নভেম্বর থেকে এই রুটে ফ্লাইট চালু করবে দেশের অন্যতম শীর্ষ এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান ইউএস-বাংলা।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ কাভার করতে মালদ্বীপ যাওয়া সাংবাদিকদের পেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উৎফুল্ল দেখা গেছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দল নিয়ে প্রবাসীদের প্রতিক্রিয়া জানানোর পর সবারই কৌতুহলী প্রশ্ন, ‘ভাই, কবে ইউএস-বাংলার ঢাকা-মালে ফ্লাইট চালু হবে। সপ্তাহে কয়দিন যাবে, ভাড়া কত হতে পারে।’
 
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপেই প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশের রেমিট্যান্সের একটি অংশও আসে এই দেশ থেকে। মালদ্বীপে লাখের বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী থাকলেও দেশি কোনো এয়ারলাইন্স নেই ঢাকা-মালে রুটে। 

দেশি এয়ারলাইন্স না থাকায় অসুবিধার কথা এভাবে বর্ণনা করলেন এক দশকের বেশি সময় মালেতে থাকা হারুনুর রশিদ, ‘অন্য এয়ারলাইন্স তাদের চাহিদা মতো ভাড়া নির্ধারণ করে। ফলে আমরা যারা স্বল্প আয়ের মানুষ, তারা অনেক সময় ছুটিতে দেশে ফিরতে মন চাইলেও পারি না, চড়া দামের টিকিটের জন্য। বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স থাকলে আমাদের জন্য টিকিট অনেক সাশ্রয়ী হতো’। 

করোনার সময় টিকিটের দাম অনেক সময় ৭০০-৮০০ ডলারও স্পর্শ করেছে। এত টাকা খরচ হবে বলে দেশে যাওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন অনেকে।

হোটেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শাহাদাত অবশ্য দেশি এয়ারলাইন্সের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন আরেক কারণে, ‘এখানে আমরা যারা কাজ বা ব্যবসা করি অধিকাংশই একাই থাকি, পরিবার থাকে দেশে। অনেকের বাবা-মা, ভাই-বোন বৃদ্ধ। সরাসরি ফ্লাইট না থাকার কারণে আমার অনেক সময় পরিবারের কেউ মারা গেলে বা জরুরি কাজে যেকোনো সময় যেতে পারি না। এটা আমাদের খুব বড় কষ্টের। দেশি এয়ারলাইন্স থাকলে যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে আসা-যাওয়া করতে সুবিধা হবে।’

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা-মালে ফ্লাইট শুরু করবে। তাদের এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন মালের বাংলাদেশি প্রবাসীরা। বিক্রয়কর্মী হিসেবে দোকানে কর্মরত আল আমিন ইউএস-বাংলার ফ্লাইট সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের একটা প্রাণের দাবি ছিল এই রুটে দেশীয় এয়ারলাইন্স চালু করা। শুনেছি নভেম্বরে ঢাকা-মালে রুটে ইউএস-বাংলা ফ্লাইট শুরু করবে। এটা শুরু হলে আমরা খুবই উপকৃত হব। স্বল্প সময়ের মধ্যে এই ফ্লাইট আশা করছি সবাই বেছে নেবে।’ 

বর্তমানে মালে-ঢাকা রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালাচ্ছে মালদ্বীপের মালদ্বীপিয়ান এয়ারলাইন্স। সপ্তাহে চার দিন চলে তাদের ফ্লাইট। মাঝে তিন দিন ছিল। জরুরি প্রয়োজনে অনেক সময় মালে আসতে অথবা ঢাকা ফিরতে প্রবাসীদের কলম্বো, দোহা ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। এতে সময়ের পাশাপাশি অর্থও ব্যয় হয় অনেক। 

ইউএস-বাংলার ফ্লাইট চালু হলে আর্থিক সাশ্রয় ছাড়াও আরেকটি প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন আল আমিন। তিনি বলেন, ‘এখানে কষ্টে অর্থ রোজগার করি। দেশে ফিরতে ও দেশ থেকে আসতে সেই অর্থ অন্য দেশের এয়ারলাইন্সকে দিতে হয়। নিজের অর্জিত অর্থ নিজের দেশের এয়ারলাইন্সকে দিতে চাই। এটাও অনেক তৃপ্তির।’

বাংলাদেশিরা ভ্রমণপ্রিয়। অনেক ভ্রমণপিপাসু ফ্লাইট জটিলতার কারণে মালদ্বীপ ভ্রমণে আসেন না। ইউএস-বাংলার ফ্লাইট চালু হলে মালদ্বীপের পর্যটনে বাংলাদেশিদের সংখ্যা আরও বাড়বে। বাংলাদেশি পর্যটকরা মালদ্বীপ গেলে প্রবাসীরাও উপকৃত হবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশীয় ফ্লাইট চালু হলে অনেকে এখানে ঘুরতে আসবেন। ফলে আমরা যারা হোটেল ও অন্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তারাও নানাভাবে উপকৃত হব।’

উন্নয়ন ও কূটনীতির অন্যতম মাধ্যম যোগাযোগ। ইউএস-বাংলার ঢাকা-মালে রুটে ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছে মালের বাংলাদেশ দূতাবাসও। দূতাবাস কর্মকর্তাদের মন্তব্য, ‘বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করলে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক আরও বাড়বে। বিশেষত মালদ্বীপে কর্মরত প্রবাসীরা দারুণভাবে উপকৃত হবেন।’

এজেড/ওএফ