ফ্লাইট ছাড়ার আগ মুহূর্তে ‘যাওয়া সম্ভব না’ ঘোষণা দিয়ে ফ্লাইট চালাতে অস্বীকৃতি জানান বিমান বাংলাদেশের একজন পাইলট। এই ঘটনায় বিপাকে পড়েন কাতারের দোহা রুটের ফ্লাইটের যাত্রীরা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই পাইলট অসুস্থ ছিলেন। ফ্লাইট ছাড়ার আগ মুহূর্তে তিনি বিমান কর্তৃপক্ষকে এ কথা জানান। বর্তমানে নতুন ক্রু টিম নিয়ে ফ্লাইট চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 

তবে পাইলটদের একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানায়, বেতন কাটার অসন্তুষ্টি নিয়ে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ফ্লাইট পরিচালনা করেননি পাইলট।

ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২৫ ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাতারে যাওয়ার কথা ছিল। স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৪০ মিনিটে দোহা পৌঁছানোর কথা ছিল তাদের। 

তবে ফ্লাইট ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে পাইলট নিজেকে ‌‘সিক’ (অসুস্থ) ঘোষণা করে ফ্লাইট চালাতে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তীতে তিনি ফ্লাইট পরিচালনা করেননি। নতুনভাবে অন্য পাইলটকে খবর দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকা ছেড়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু সালেহ মোস্তফা কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কেউ যদি ইলেভেন্থ আওয়ারে (ফ্লাইট ছাড়ার আগ মুহূর্তে) নিজেকে সিক (অসুস্থ) ঘোষণা করে সে ক্ষেত্রে আমরা তাকে ফ্লাইট পরিচালনায় জোর করতে পারি না। আমরা নতুন পাইলট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ কারণে কাতার ফ্লাইটে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।’

পাইলটদের বেতন কাটার অসন্তোষ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে তারা আমাকে কিছু জানায়নি। ফ্লাইট বাতিলের কারণ হিসেবে পাইলট সিক বলেছেন।’

ফ্লাইট চালাতে অপারগতা প্রকাশের কারণ জানতে চাইলে মন্তব্য করেননি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান। 

মোটা অংকের বেতন কাটা আর অন্যান্য স্টাফদের সঙ্গে বৈষম্য নিয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলটরা। বেতন বৈষম্য দূর না করলে কঠোর আন্দোলনেও যাওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন তারা। 

ঘটনার সূত্রপাত হিসেবে ওই সময় পাইলটরা বলেছিলেন, ২০২০ সালের মে থেকে তাদের বেতন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ১৩ জুলাই বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দীন আহমেদের একটি অফিস আদেশে সংস্থাটির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। কিন্তু পাইলটদের বেতন কাটার বিষয়টি বহাল থাকে। এরপর থেকেই ক্ষুব্ধ হন তারা। 

বেতন সমন্বয় না হলে বিমানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনা না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। আন্দোলনে সৌদি আরবের দাম্মাম, কাতারের দোহা, আবুধাবি ও দুবাই রুটে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে বিমানের আশ্বাসে তারা সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছিলেন।

পাইলটদের বেতন কাটার হিসেব

বিমানের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব ককপিট ক্রুর (পাইলট অন্তর্ভুক্ত) চাকরির বয়স ৫ থেকে ১০ বছর, এ বছরের জুলাই থেকে তাদের বেতনের ৫ শতাংশ এবং যাদের চাকরির বয়স ১০ বছর বা এর ঊর্ধ্বে তাদের ২৫ শতাংশ বেতন কাটা হয়।

তবে যেসব ককপিট ক্রুর চাকরির বয়স শূন্য থেকে পাঁচ বছর তাদের কোনো বেতন কাটা হবে না। 

এআর/ওএফ