ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হল (এসএম) শাখা ছাত্রদলের কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের প্রার্থীকে নেতা বানাতে অনিয়মের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পদবঞ্চিত নেতারা।

শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) নবগঠিত কমিটির প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে বিএনপির দপ্তর সম্পাদকের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে কেন্দ্রীয় ও ঢাবির শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগপত্র পাঠান পদবঞ্চিতরা।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতারা কোনো কর্মীর কথা না ভেবে ব্যক্তিস্বার্থ কায়েমের জন্য চরম স্বেচ্ছাচারিতা কায়েম করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির অন্তর্ভুক্ত ঐতিহাসিক সুলিমুল্লাহ মুসলিম হল কমিটি গঠনে চরম স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের ১৩টি হলের মধ্যে ১২টি হল কমিটি দুই বছর আগে গঠিত হলেও এত দিন এই একটি হল কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় কর্মীদের মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হচ্ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে কারও মতামত তোয়াক্কা না করে নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতা কায়েম করে আসছিল।

এতে উল্লেখ করা হয়, আগে গঠিত ১২টি হলের ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। প্রতিটি হলে সিলেকশনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হলেও এসএম হলে জোর পূর্বক ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হয়। এতে হলের নেতাকর্মীদের ভোটার না করে অগণতান্ত্রিকভাবে কেন্দ্রীয় শীর্ষ চার নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নিজেদের ভোটার ঘোষণা করে। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী ভোট বর্জন করলেও বাকি পদপ্রত্যাশীদের হুমকি প্রদান করে এই ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে বাধ্য করা হয়।

কমিটি স্থগিত করার দাবি জানিয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ১১ বছরে চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আমরা আমাদের জীবনের সব আশা- আকাঙ্ক্ষা প্রাণপাত করে রাজপথে অবস্থান করে আসছি। জেল-জুলুম ও সব নির্যাতন উপেক্ষা আপনার নির্দেশের অপেক্ষায় থাকি। আপনি আমাদের আশা ও ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। আপনার কাছে আকুল আবেদন আমাদের প্রতি এ অন্যায়ের সুষ্ঠু প্রতিকার ও সমাধান চাই এবং অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠিত কমিটি স্থগিত করার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান আশা করছি।

অভিযোগপত্রে নবগঠিত কমিটির প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে স্বাক্ষর করেছেন ১৩ জন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ-প্রার্থী। তারা হলেন— নাহিদুজ্জামান শিপন, নাছির উদ্দিন শাওন, রাজু আহম্মেদ, হাসান আবিদুর রেজা বায়েজিদ, মোহাম্মদ আল আমীন, কাওছার সরকার, সুলতান মো. সালাউদ্দিন সিদ্দিক, জুবায়ের আহমেদ, ইমন হোসেন, রেদোয়ান মাহেদী জয়, সাকিব হোসেন, আফসার তারিক, ইয়াসিন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের পদপ্রার্থী নাহিদুজ্জামান নাহিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসএম হলে বেশ কয়েকজন যোগ্য প্রার্থী ছিল। কিন্তু নিজেদের পকেট ম্যানকে নেতা বানাতে গিয়ে সবাইকে বাদ দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসা, তেলবাজ লোককে ধরে এনে নেতা বানানো হয়েছে। গত হল সংসদ নির্বাচনে হলের ভিপি প্রার্থী ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে সামনে ছিলাম। কিন্তু আমাকে বানানো হয়নি। শীর্ষ নেতারা যদি আমাকে যোগ্য মনে না করেন, তবে অন্য আরও কয়েকজন যোগ্য প্রার্থী ছিল তাদেরও বানানো হয়নি। এটা তারা গায়ের জোরে করেছে।

আরেক প্রার্থী রাজু আহম্মেদ বলেন, আমাদের প্রধান অভিযোগ হচ্ছে অন্য ১২টি হলে সিলেকশন হলেও আমাদের ক্ষেত্রে কেন নয়, আর ভোট হলেও এখানে কেন্দ্রীয় ও ঢাবির শীর্ষ নেতারা ভোট দিতে পারেন না, এখানে ভোট দেবে কর্মীরা কিংবা হলের আহ্বায়ক কমিটি। আমরা এ অনিয়মের বিরুদ্ধে দলীয় মাধ্যমে সর্বোচ্চ অভিভাবকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশা করছি তিনি এ বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করবেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবার উপস্থিতি ও মতামতের ভিত্তিতে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভোটের মাধ্যমে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে। অভিযোগ যে কেউ দিতেই পারে। তারা যেহেতু ছাত্রদলের সর্বোচ্চ অভিভাবকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন, এ বিষয়ে তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।

ভোটের বিষয়টি অস্বীকার করে ঢাবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান বলেন, কমিটি গঠনে ভোট হয়নি, লিখিত মতামতের ভিত্তিতে এটি করা হয়েছে। যেখানে কেন্দ্রীয় শীর্ষ পাঁচ নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ দুই নেতা মতামত দিয়েছেন। তারা যদি কোনো কমিটি গঠন করেন, এর চেয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া তো আর হতে পারে না। পদপ্রার্থী এবং নেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলকে একাধিক ফোন করা হলেও তারা রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী এক বছরের জন্য সলিমুল্লাহ মুসলিম হল (এসএম) শাখা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

ঘোষিত কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী আবদুর রহিম রনি এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম তারিক। তারা একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এইচআর/এসএসএইচ