এবার ছাত্র উপদেষ্টা ড. সমীরণ কুমার সাহা ও প্রক্টর ড. হাসিবুর রহমানের পদত্যাগসহ নানা দাবিতে একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

সোমবার (৭ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনে তালা লাগিয়ে ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় একাডেমিক ভবনের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ভবনের প্রধান গেট-সংলগ্ন ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের অফিস বন্ধ পাওয়া যায়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বর্তমান ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, অহরহ ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা প্রবেশ করে। তাদের ব্যর্থতায় ফলাফল আটকে শুরু হয়েছে সেশন জট, ফলে ছাত্রজীবনই হুমকির মুখে। এ ছাড়া প্রক্টর কর্তৃক লেকের মাছ লুটসহ নানা অনিয়মে তারা জড়িত। আবাসিক হলগুলোতেও নিরাপত্তা নেই। ক্যাম্পাসের যত্রতত্র ভারী গাড়ি চলাচল, প্রধান গেটে স্পিডব্রেকার ও লাইটিংসহ নানা অব্যবস্থাপনার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

এ ছাড়া দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার ও স্বজনপ্রীতিতে অভিযুক্ত সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তারা। তাই তাদেরও আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে, নাহলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা ‘অবৈধ প্রক্টর মানি না মানব না’, ‘টিকটকার প্রক্টরের পদত্যাগ চাই করতে হবে’, ‘ছাত্র উপদেষ্টার কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘দুর্নীতি আর করিস না, পিঠের চামড়া থাকবে না’সহ নানা স্লোগান দেন।

এদিকে টানা দশম দিনেও অব্যাহত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের আন্দোলন। আজও বন্ধ রেজিস্ট্রার অফিস। ১৭ দফা দাবিতে রেজিস্ট্রার অফিসে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান নেন কর্মকর্তারা। ফলে অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি রেজিস্ট্রারসহ অফিসের কর্মকর্তারা।

ছাত্র উপদেষ্টা ড. সমীরণ কুমার সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেশন জোট বা রেজাল্ট আটকে থাকা না থাকার সঙ্গে ছাত্র উপদেষ্টা বা প্রক্টরের সংশ্লিষ্টতা নেই। এগুলো আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। আর অনেক সময় শিক্ষার্থী, শিক্ষক বা কর্মকর্তারাই তাদের সঙ্গে বহিরাগত নিয়ে আসেন। ফলে তাদের আটকানো কঠিন হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে ছাত্ররা তাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে এলে তাদের দাবিগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ছাত্র উপদেষ্টা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিছুদিন ধরে আমাদের ক্যাম্পাসে এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি চলছে। এই মুহূর্তে আমাদের ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারারের মতো অভিভাবকের পদগুলো খালি। আমরা এই মুহূর্তে অভিভাবকহীন, তাই নতুন ভিসি নিয়োগ হলে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। শিক্ষার্থীরা হয়তো কারও কথায় আবেগের বসে এগুলো করছে। যেহেতু ভিসি স্যারই আমাকে নিয়োগ করেছিলেন, তাই আমার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা রয়েছে কি না, তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

উল্লেখ্য, রোববার (৬ মার্চ) নানা অভিযোগে বিতর্কিত পাবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর মেয়াদ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের ৭ মার্চ নিয়োগ পাওয়া এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে শতাধিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। মেয়াদ শেষের দিকে তিনি সেকশন অফিসার পদে নিজের আপন ভাতিজি কানিজ ফাতেমা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওলিউল্লাহসহ ১০২টি পদে নানা অনিয়মে নিয়োগ দেন।

এসব অভিযোগ নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচি পালন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। উপাচার্যকে অবরুদ্ধ, বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি, রেজিস্ট্রার ভবনে তালা ও উপাচার্যের কুশপত্তলিকার পর এবার একাডেমিক ভবনে তালা দিলেন শিক্ষার্থীরা।

রাকিব হাসনাত/এনএ