শুক্রবার শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী গণসমাবেশের ঘোষণা
মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়
রাজধানীর শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী গণসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন। শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় এই গণসমাবেশ হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে তারা।
আজ (মঙ্গলবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সমাবেশের ঘোষণা দেন প্রগতিশীল ছাত্র, নারী, যুব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের এই প্ল্যাটফর্ম। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স।
বিজ্ঞাপন
লিখিত বক্তব্যে প্রিন্স বলেন, আমরা অত্যন্ত আতঙ্কের সাথে লক্ষ্য করলাম দেশব্যাপী ধর্ষণবিরোধী এই গণজাগরণের মধ্যেই ধর্ষণের মাত্রা, তীব্রতা ও ভয়াবহতা অন্য যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই ৮-১০টি ধর্ষণের খবর এই সময়ও এসেছে। এরকম নানা বীভৎস খবর প্রতিদিনই পত্রিকার পাতা জুড়ে থাকছে। সম্প্রতি মাস্টারমাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থী ধর্ষণ এবং দায়ীর পরিবার বিত্তবান ও প্রতাপশালী হওয়ায় সেই ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে টালবাহানা, শহীদ মিনারে ফুলবিক্রেতা শিশু মীম হত্যার ঘটনা, মোহাম্মদপুরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে আইন পাস করেই যে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না, সেই শঙ্কার কথা আমরা আগেই প্রকাশ করেছিলাম। সেই আশঙ্কা এখন সত্য হিসেবে প্রকাশ পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আইনের রক্ষক থেকে শুরু করে ক্ষমতার সাথে যুক্ত ছাত্র-যুব-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবং তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীরাই এসব ঘটনার বেশিরভাগের সাথে যুক্ত বলে দেখা যাচ্ছে। দেশব্যাপী অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে। এটিই এদের ক্ষমতার উৎস। আমরা আগামী শুক্রবার বিকেল ৩টায় শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী গণসমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছি।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলন থেকে ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে ৯ দফা দাবিও উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো-
১। সারাদেশে অব্যাহতভাবে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার সাথে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
২। পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সকল প্রকার যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করা।
৩। হাইকোর্টের নির্দেশানুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি, বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী সেল কার্যকর করা।
৪। ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫ (৪) ধারা বিলোপ করা।
৫। অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে অন্তর্ভুক্ত করা।
৬। তদন্তকালে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করা।
৭। ধর্মীয়সহ সকল ধরণের সভা-সমাবেশে নারীবিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা।
৮। পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যে কোনো প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করা।
৯। গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মাসুম, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি শিলা দত্ত, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা প্রমুখ।
এসএসএইচ/এনএফ