রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে একই কলেজের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ছাত্রের নাম হাবিবুর রহমান। তিনি কলেজের স্নাতক ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ক্যাম্পাসে ‘যৌন হয়রানির অভিযোগ’ প্রসঙ্গে একটি দরখাস্ত জমা দিয়েছেন।

এতে ওই ছাত্রী লেখেন, ‘আমি আপনার কলেজের ইংরেজি বিভাগের একজন ছাত্রী। গত বুধবার (১৮ মে) দুপুর দুইটার দিকে নতুন ভবনের (৭ নং) ৩য় তলায় লাইব্রেরি থেকে পড়া শেষে ফেরার পথে সিঁড়িতে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের হাবিবুর রহমান হাবিবের সঙ্গে দেখা হয়। কথা বলার এক পর্যায়ে সে আমার হাত ধরার চেষ্টা করে। আমি বাধা দিলে সে আমাকে জড়িয়ে ধরে, অসৎ উদ্দেশ্যে গায়ে হাত দেয় এবং খুব বাজেভাবে হয়রানি করে। নিজেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে আমি চিৎকার করলে সে আমার মুখ চেপে ধরে। দুপুরের খাবারের সময় ও নতুন ভবন সম্পূর্ণরূপে চালু না হওয়ায় সেখানে তখন কোন শিক্ষার্থী ছিল না। এরকম পরিস্থিতিতে আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার দাবি করছি।’

অভিযোগপত্র জমার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সরকারি বাঙলা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক অধ্যাপক মিতুল চৌধুরী।  

ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমরা এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছি এবং এটা নিয়ে বসব। অবশ্যই আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। বিকেলে আমরা কলেজ অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেছিলাম। দুই বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। এ বিষয়ে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। এর সঙ্গে কলেজের মানসম্মান জড়িত।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমানের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোন কিছু জানেন না উল্লেখ করে সাংবাদিকের কাছে অভিযোগকারী ওই শিক্ষার্থীর নাম-পরিচয় ও কোথায় অভিযোগ করা হয়েছে তা জানতে চান।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানি না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে হাবিবুর রহমান এর আগেও একাধিকবার ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় অভিযুক্ত। ২০১৮ সালের শেষের দিকে বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রুবেল হোসেনকে কলেজ ক্যাম্পাসে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় দারুসসালাম থানায় এখনও চলমান মামলার আসামি হাবিব।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাবিব বলেন, আমি তাকে (রুবেল হোসেন) কুপিয়ে আহত করেছি এটি একটি মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। তবে ক্যাম্পাসে অনেক সময় গ্রুপিং নিয়ে মারামারি হয়। গ্রুপিং কিছু শত্রুতা থাকে বা একটু বিশৃঙ্খলা বা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। এটা অনেক আগের ঘটনা এগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট। রুবেল ভাইকে হামলার পেছনে আমার প্রত্যক্ষ পরোক্ষ কোন হাত ছিল না।

এ সময় তিনি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, আপনারা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন ও ষড়যন্ত্রমূলক আচরণ করছেন। বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালের কাজই হচ্ছে মানুষকে বিভ্রান্ত করা, চাঁদাবাজি করা, ব্ল্যাকমেইল করা, মিথ্যা ভূয়া নিউজ দেওয়ার অজুহাতে মানুষের কাছে চাঁদাবাজি করা। আমি আপনাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিব।

অভিযুক্ত হাবিব সবশেষ গত এপ্রিল মাসের ১২ তারিখ বাঙলা কলেজ সাংবাদিক সমিতির দুই নেতাকেও পিটিয়ে আহত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফেরদৌসীকে খানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

আরএইচটি/আইএসএইচ