ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১৫ জন শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে।

বুধবার (১৮ মে) রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে। তবে আজ তাদের আবার হলে ফিরিয়ে আনা হয় এবং রাত ১২টায় তাদের গেস্টরুমে ডাকা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা সবাই ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৭ মে মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল। পরীক্ষা থাকার কারণে সেই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারেননি তৃতীয় বর্ষের অনেক শিক্ষার্থী। যার কারণে গতকাল বুধবার (১৮ মে) রাতে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে বের করে দেয় চতুর্থ বর্ষের ছাত্রলীগ কর্মীদের একটি অংশ। এর নেতৃত্বে ছিলেন আলী আজম ও আরিফ রানা সজল।

আলী আজম ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এবং আরিফ রানা সজল বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা দুজনেই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের অনুসারী। মাহবুবুর রহমান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে নিয়মিত ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু পরীক্ষার কারণে সেদিন প্রোগ্রাম করতে পারিনি। যার ফলে আমাদের বের করে দেওয়া হয়। ওই দিন রাত আর আমরা আমাদের সিটে থাকতে পারিনি। তৃতীয় বর্ষে উঠেও আমরা এই নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। নিয়মিত প্রোগ্রাম গেস্টরুম করতে হচ্ছে। যা আমাদের পড়াশোনায় বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটছে।

প্রত্যক্ষদর্শী তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, ঘটনাটি সত্য, তাদের বের করে দেওয়া হয় এবং তাদের স্থলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের তোলার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও পরবর্তীতে সাংবাদিকরা বিষয়টি জানার কারণে তাদের আবার সিট ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আলী আজম বিষয়টি অস্বীকার করেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, বিষয়টি সত্য নয়। তাদের হল থেকে বের করে দেওয়ার অধিকার আমাদের নেই। হলে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আছে ৮০ জন, স্বেচ্ছায় ছাত্রলীগের রাজনীতি করে প্রতি ব্যাচের ১০-১৫ জন। আমরা যদি বের করে দিতাম তাহলে তো সবাইকেই দিতাম। এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। সামনে হল কমিটি তাই হয়ত কেউ ষড়যন্ত্র করছে। তবে আরেক অভিযুক্ত সজলকে কল করা হলেও রিসিভ না করায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা মিথ্যা অভিযোগ। আমি খোঁজ নিয়েছি এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং কেউ অভিযোগও দেয়নি। তৃতীয় বর্ষের ১৫ জন ছাত্রকে হল থেকে বের করে দেবে এটা কখনো হতে পারে না। কেউ হয়ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই অভিযোগ তুলছে।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকরাম হোসেন।

অভিযোগ রয়েছে, সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ছাত্রলীগের ডাকা গেস্টরুমে অংশ নিতে হয় প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের। অংশ না নিলে তাদের উপর নেমে আসে নির্যাতন। গেস্টরুমেও তাদের ওপর চলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। চলতি বছরের ১০ মার্চ গেস্টরুমে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়ে হল ছাড়তে হয় অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু তালিবকে। দুই মাস পরও তাকে হলে তোলার কোনো উদ্যোগ নেয়নি হল প্রশাসন।

এইচআর/এসকেডি