বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝরাতে মেস থেকে বের করে মারধরের ঘটনায় অবশেষে মামলা করল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মুহাম্মদ মুহসিন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমরা তদন্ত করে দেখব, সেই রাতে হামলাকারী কারা ছিল। তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

তবে মামলায় অজ্ঞাতদের আসামি করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মামলায় আসামিদের নাম উল্লেখ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থী আল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মারধরের শিকার শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের নাম জানিয়েছেন। তারা হামলাকারীদের চিনতে পেরেছেন। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লুকোচুরি করে লোক দেখানো মামলা করেছে। এ অবস্থায় আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সুজয় শুভ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তারা মামলায় গুরুতর জখমের কথা উল্লেখ করেছে; অথচ শিক্ষার্থীদের হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মানিব্যাগ, ল্যাপটপ নিয়ে গেছে তারা। সেগুলো উল্লেখ নেই মামলার এজাহারে। এই মামলা প্রত্যাখ্যান করছি আমরা। আন্দোলন চলবে আমাদের।

এ বিষয়ে জানতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ছাদেকুল আরেফিনের মুঠোফােনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাত দেড়টার দিকে রূপাতলী হাউজিংয়ের সি-ব্লকের হারুন ম্যানশন ভবনের মেসে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সেখানে অবস্থানকারী ছাত্রদের মারধর করে মারাত্মক জখম করা হয়। হামলায় ১১ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে ছুরি দিয়ে কোপ দেন রূপাতলী বিআরটিসি কাউন্টারের হেলপার রফিক। এ সময় আরও এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করেন রফিক ও কাউন্টারম্যান বাদল। প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিআরটিসি কাউন্টার ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করেন।

সড়ক অবরোধ তুলে দেওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে আসেন রূপাতলী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন মোল্লাসহ ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতারা।

এ সময় কাওছার হোসেন শিপনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয় শিক্ষার্থীদের। সড়ক অবরোধের মধ্য থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে ২৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন মোল্লাকে লাঞ্ছিত করেন শিক্ষার্থীরা। সেই ঘটনার রেশ ধরে কাওছার হোসেন শিপন ও ইমরান হোসেন মোল্লার লোকেরা রাতে মেসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তবে কাওছার হোসেন শিপন বলেন, এই হামলা বা ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

হামলার পর পরই রাত আড়াইটার দিকে সড়কে কাঠ পুড়িয়ে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের আশ্বাসে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়ে বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় ১৪ ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএম