উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জাবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান
হল খোলার দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জাবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পর নিরাপত্তার স্বার্থে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে একত্রিত হন। সেখান থেকে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যান।
এর আগে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গেরুয়া গ্রামবাসী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একাধিক শিক্ষার্থী গুরুতর জখম হন। এ সময় অন্তত চারটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় মসজিদগুলোয় মাইকিং করে স্থানীয়দের জড়ো করা হয়। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গেরুয়া এলাকার মেসে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের উদ্ধারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাই সহপাঠীদের উদ্ধারের জন্য তারা জড়ো হয়েছেন বলে দাবি করেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলাকালে রাত আটটার দিকে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তারা স্থানীয়দের কাছ থেকে আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেন। পরে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
হামলায় গুরুতর আহত বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী পিয়াস ইজাদ্দার এলেক্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা হামলা চালিয়েছে। ওরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। গেরুয়াতে সম্প্রতি একটা ক্রিকেট খেলা শুরু হয়। সেখানে স্থানীয় ও ক্যাম্পাসের ছেলেদের নিয়ে দল গঠন করা হয়েছিল। খেলা চলার সময় জামসিং থেকে আসা ছেলেরা মারামারি শুরু করে। তখন আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই মারামারি মেটাতে যায়।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে কয়েক দফা এই বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মিটমাট করার কথা বলা হয়। জামসিংয়ের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা মিটমাট করার কোনো চেষ্টা না করে উল্টো আমাদের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। এরপর আমরা বারবার চেষ্টা করেছি বিষয়টি সমাধান করার। কিন্তু স্থানীয়দের কোনো সহায়তা পাইনি। পরবর্তীতে শুক্রবার গেরুয়া বাজারে খেলার আয়োজক কমিটির সদস্য নজরুলকে পাই আমরা।
কিন্তু হঠাৎ করেই স্থানীয়দের একটি সংঘবদ্ধ দল আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। আমাদের অনেক ভাইকে একটা ভবনে আটক করে রাখে তারা। এছাড়া এলাকায় ডাকাত পড়ছে বলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন পুরো এলাকাবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
তবে খেলা আয়োজক কমিটির সদস্য নজরুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু খেলা নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। গত ১১ তারিখ একটা ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হয়। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনা সমাধান করার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিকবার বসার চেষ্টা করি। কিন্তু তারা আমাদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে আমাকে জিম্মি করে দুই লাখ টাকা দাবি করে। তখন স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে।
মসজিদের মাইকে ঘোষণার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাসের পোলাপান সংঘবদ্ধ হয়ে এলাকাবাসীর ওপর হামলা চালায়। তখন বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে এলাকার মসজিদে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করা হয়। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংঘবদ্ধ হামলা মোকাবিলা করতেই এমন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
সংঘবদ্ধ হামলার বিষয়ে স্থানীয় পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী স্থানীয় এক ব্যক্তিকে কোনো একটা কারণে ধরে নিয়ে যায়। তখন এলাকাবাসী ওই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে আনতে যায়। এরপরই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় লোকজন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় অনেকেই আহত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুক্রবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি সভা আহ্বান করেছে। তদন্ত কমিটি করে দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এসপি