প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট গত ৪ জুলাই ‘একটি ছবি ঘিরে ঢাবি সাদা দলে ক্ষোভ-অসন্তোষ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। এ সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) পাঠানো প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, আপনার নিউজ পোর্টাল ‘ঢাকা পোস্ট ডট কম’- এ গত সোমবার ‘একটি ছবি ঘিরে ঢাবি সাদা দলে ক্ষোভ-অসন্তোষ’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে আমার সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে বিভ্রান্তিকর ও মনগড়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি মনে করি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক কোনো প্রলোভনে পড়ে বা আমার প্রতিপক্ষের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসত্য এবং মনগড়া রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে আমাকে সামাজিকভাবে চরম হেয়প্রতিপন্ন করেছে। যার ফলে আমার সম্মান মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমি এ ঘটনায় রিপোর্টটি প্রত্যাহার পূর্বক তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিজ্ঞাপন
আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত 'মুজিববর্ষ' উপলক্ষে দেশজুড়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তারই ধারবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের কার্যকরী কমিটির উদ্যোগে শিক্ষকদের সন্তানদের জন্য একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। এই কর্মসূচির সিদ্ধান্ত আমার একার নয়। গত এক বছরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সভাপতি। ক্লাবের পক্ষ থেকে যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ছিল সেই প্রতিযোগিতার বিচারকরা যাচাই করে সেরা তিনটা ছবি বাছাই করেন। সেই ছবিগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রো-ভিসিদ্বয়কে উপহার দেওয়া হয়েছে। ক্লাবের রীতি অনুযায়ী, সব প্রোগ্রামেই সভাপতির হাত থেকে কোনো কিছু তুলে দিতে হয়। সভাপতি হিসেবে সেগুলো তুলে দিয়ে আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। এর বাইরে আমার কোনো ভূমিকা নেই।
বিজ্ঞাপন
শুধু তাই নয় কোনো চিত্রকর্ম প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সেটাও আমি জানতাম না। কেননা সেই বিষয়ে আমার কোনো কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) ছিল না। আমি শুধু সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। বিচারকদের বাছাই করা ছবি ক্লাবের প্রথা অনুযায়ী তাদের উপহার দেওয়াতে বুঝায় না যে, আমি অন্য মতাদর্শ ধারণ করি।
এছাড়া আপনার অনলাইনে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে- ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দলের সঙ্গে আমার সখ্য রয়েছে’। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ মনগড়া এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটা সম্পূর্ণরুপে মিথ্যা কথা। আমি ২০০৯ ও ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। সেসময় আমি শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করি নাই। কারণ আমি ছাত্রদল করা ছেলে, আমার আদর্শ এটাই। সুতরাং আমার দ্বারা এমন কোনো কার্যক্রম হতে পারে না, যেখানে আমার আদর্শের বিচ্যুতি ঘটে।
শুধু তাই নয়, প্রকাশিত রিপোর্টে ঢাবি সাদা দলের একজন ‘প্রভাবশালী’ শিক্ষকের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘সুবিধাবাদী’ ও বিএনপির ছদ্মবেশে ‘আওয়ামী লীগের এজেন্ট’ সহ আমার বিরুদ্ধে আরও যেসব কুরুচিপূর্ণ অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট, অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের কাছে ঢাবি সাদা দলের তথাকথিত ওই ‘প্রভাবশালী’ শিক্ষকের নাম জানতে চাই। কেননা ঢাবি সাদা দলের একটি নির্বাচিত নির্বাহী কমিটি রয়েছে। যদিও রিপোর্টে সাদা দলের বর্তমান কমিটির কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির বক্তব্য দেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী দলীয় বিষয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোনো ব্যক্তি বক্তব্য দেওয়ার কথা নয়। যেহেতু ‘প্রভাবশালী’ শিক্ষকের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে তাতে রিপোর্টের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
অতএব উল্লিখিত বিষয়ে যথাযথভাবে আপনার নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট ডট কম- এ আমার প্রতিবাদ প্রকাশ পূর্বক ‘একটি ছবি ঘিরে ঢাবি সাদা দলে ক্ষোভ-অসন্তোষ’ শিরোনামে রিপোর্টটি প্রত্যাহার এবং দুঃখ প্রকাশের জন্য আপনার সবিনয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অন্যথায় আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবো।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
‘একটি ছবি ঘিরে ঢাবি সাদা দলে ক্ষোভ-অসন্তোষ’ শিরোনামে সংবাদটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষকদের ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে আমার নিজের কোনো মন্তব্য নেই, সবই সাদা দলের শিক্ষকদের বক্তব্য ও অভিযোগ যার অডিও আমার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
বিবৃতিতে অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম তার বিষয়ে বিভিন্ন ‘বিভ্রান্তিকর ও মনগড়া’ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে দাবি করেছেন। যদিও একই বিবৃতিতে তিনি ‘ক্লাবের রীতি অনুযায়ী ছবি তুলে দিয়েছেন’ উল্লেখ করে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন। প্রকাশিত সংবাদেও তার বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম আওয়ামী সমর্থিত নীল দলের সঙ্গে সখ্য থাকার প্রতিবাদ জানালেও ‘নব্বইয়ের দশকে নীল দলের সক্রিয় কর্মী থাকা এবং চেয়ার দখলে রাখার’ বিষয়ে কিছু বলেননি যা ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করে।
অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম রিপোর্টারের ‘প্রলোভনে পড়ে’ সংবাদ তৈরির অভিযোগ করেছেন যার মাধ্যমে প্রকৃত সাংবাদিকতায় তার ভয় পাওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। বিবৃতিতে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য তিনি সোর্সের নাম জানতে চেয়েছেন যা সাংবাদিকতার ‘নীতিবিরুদ্ধ’। তবে সোর্সের নাম জানতে চাইলেও সোর্সের তথ্যকে তিনি অস্বীকার করতে পারেননি। বিবৃতির শেষে তিনি ‘ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবো’ দ্বারা প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা সর্বোপরি একজন শিক্ষকের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত এবং অনভিপ্রেত।
এইচআর/এসএম