ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় দোষীদের বিচার এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সকাল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ব্যানারে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অবস্থান নেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষকও অংশগ্রহণ করেন।

এর আগে বেলা ১১টায় ক্লাস বর্জন করে প্রথমে বিজ্ঞান অনুষদ ও পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একত্রিত হন।

এ সময় রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা শারমিন বলেন, যে ঘটনার বিচার চার ঘণ্টার মধ্যে হওয়ার কথা ছিল সে ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন কিছু করতে পারেনি। ক্যাম্পাসকে আমরা আমাদের বাড়ির মতো মনে করি। এখানে প্রশাসন আমাদের অভিভাবক। আমাদের বাড়িতে আমাদের অভিভাবকরাই আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছেন না। এ রকম অভিভাবক থেকে কী লাভ?

এর আগে গতকাল রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রীরা। এ সময় চার দফা দাবি মেনে নেওয়ার শর্তে সেখান থেকে সরে আসেন ছাত্রীরা।

দাবিগুলো হলো- 

১. বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও মেডিকেল সেন্টারে প্রবেশের সময়সীমা তুলে নেওয়া এবং ক্যাম্পাসে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

২. যৌন নিপীড়ন সেল ভেঙে নতুন কার্যকরী যৌন নিপীড়ন সেল গঠন করতে হবে এবং গঠিত সেলে বিচার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ সময় থাকবে এক মাস। এক মাসে বিচার নিশ্চিত করণে ব্যর্থ হলে যৌন নিপীড়ন সেল নিজে শাস্তির আওতাভুক্ত হবে।

৩. যৌন নিপীড়ন সেলে বর্তমান চলমান কেইসগুলো আগামী চার কার্যদিবসের মধ্যে সমাধান করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৪. চলমান ঘটনাগুলোর বিচার ৪ কার্যদিবসের মধ্যে করতে না পারলে প্রক্টরিয়াল বডির সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। শহীদ মিনার থেকে তারা সরে প্রক্টর অফিস এবং পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন।

প্রসঙ্গত, গত রোববার (১৭ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হল সংলগ্ন এলাকায় ৫ জন দুর্বৃত্তের হাতে শারীরিক হেনস্তার শিকার হন এক ছাত্রী। ওই সময় তার সঙ্গে থাকা তার বন্ধুকেও মারধর করা হয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয় মোবাইল ফোন। পরে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিলে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

যৌন নিপীড়নের এ ঘটনার জেরে ছাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের হলে প্রবেশের ব্যাপারে সময়সীমা বেঁধে দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন করে ক্ষোভ দেখা দেয়।

রুমান হাফিজ/আরআই