শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ৬ দিন পর ক্যাম্পাসে হাজির হয়েছেন নিহতের পরিবার। এ সময় বুলবুল হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার ও তদন্ত দাবি করেন তার মা।

রোববার (৩১ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে নরসিংদী সদর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে হাজির হন নিহত বুলবুলের মা ইয়াসমীন বেগম, ভাই জাকারিয়া, বোন সোহাগী আক্তারসহ পরিবারের ৯ সদস্য। ক্যাম্পাসে এসেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। নিহত বুলবুলের মা-বোন ও ভাইয়ের আর্তনাদে শাবিপ্রবির পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। তাদের গগণবিদারী আহাজারিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন বুলবুলের সহপাঠীরা।

ক্যাম্পাসের শাহপরান হলের অতিথি কক্ষে তাদের অভ্যর্থনা জানান হল প্রভোস্ট ড. মিজানুর রহমান খান। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানকালে নিহত বুলবুলের মামা তার থাকার কক্ষ (২১৮) ঘুরে দেখেন। পরবর্তীতে বুলবুলের ব্যাবহার করা ল্যাপটপ, হাতঘড়ি, তোষক, টেবিল ল্যাম্পসহ ১৫ ধরনের সামগ্রী বুলবুলের মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন হল প্রভোস্ট। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল।

এ সময় তারা বুলবুলের বান্ধবী মার্জিয়া আক্তার উর্মির সঙ্গে দেখা করতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার এস আই দেবাশীষ দেব বিষয়টি তদন্তাধীন আছে জানিয়ে তাদেরকে দেখা করতে দেননি। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা খলিলুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনের একটি গ্রুপ তাদের নজরবন্দি করে রাখেন। এ সমিয় তারা আলাদা আলাদাভাবে নিহত বুলবুলের পরিবারের সদস্যদের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেনএবং নিহত বুলবুলের পরিবার ক্যাম্পাস ছাড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা সঙ্গে ছিলেন।

নিহতের ভাই মো. জাকারিয়া ঢাকা পোস্টকে জানান, আমার ভাইয়ের দাফনের পর কোনোভাবেই মাকে আটকে রাখতে পারছিলাম না।তিনি বারবার বুলবুলের ক্যাম্পাস ও থাকার জায়গা দেখার জন্য আকুতি করে আসছিলেন, তাই আজ নিয়ে এসেছি। আমরা ৪ ভাই-বোনের মধ্যে বুলবুল ছিলো সবার ছোট। তাকে পড়াশোনা করাতে গিয়ে আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। কিন্তু একটা ঘটনায় আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।

মামলার বিচার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের অন্তিম মুহূর্তে তার সঙ্গে ছিল উর্মি। কিন্তু রহস্যজনকভাবে পুলিশ তার সঙ্গে আমাদের দেখা করতে দেয়নি। আমরা চেয়েছিলাম তার সঙ্গে একটু কথা বলতে। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন তাকে কেন আড়ালে রাখতে চেয়েছে সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। দেখা করার জন্য বারবার তাগাদা দিলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন এখন দেখা করা যাবে না। এক সপ্তাহ পরে দেখা করবেন।

এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাকারিয়া আফসোস করে বলেন, মেয়েটির (উর্মি) সঙ্গে আমার ভাইয়ের শেষ কথা হয়েছিল। তার সঙ্গে দুটি কথা বলতে চেয়েছিল আমার মা, কিন্তু সেটি আর হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমার ভাই অনেক লম্বা ও সুঠামদেহের অধিকারী ছিল। তার মতো একজন লোককে ছোট ২-৩ জন লোক কীভাবে মেরে পালাল তা মিলাতে পারছি না। এ ছাড়া মেয়েটা (উর্মি) কেন পালাল, তার মোবাইলের কললিস্ট কেন ডিলিট করল, এগুলো নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আমার ভাইয়ের প্রায় ১৫ মিনিট রক্তক্ষরণ হয়েছিল শুনেছি, সেই সময় এই মেয়ে কী করছিল? কোথায় ছিল? এই প্রশ্নের উত্তরগুলো আমরা জানতে চাই। তাই মেয়েটিকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি।

বুলবলের সঙ্গে উর্মির সম্পর্ক আপনারা জানতেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এসবের কিছুই জানি না। বিচারের বিষয়ে সন্দিহান হয়ে তিনি বলেন, শুনেছি আসামি দুইজন নাকি খুবই অল্প বয়সের, আর যে একজনের বয়স বেশি সেও নাকি ক্যান্সার আক্রান্ত। এই অবস্থায় যদি বিচার বিলম্বিত হয় তবে বিষয়টি হালকা হয়ে যাবে। তাই অনতিবিলম্বে মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি।

শাবি উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, গতরাতে তার সঙ্গে আমাদের মোবাইলে আলাপ হয়। তিনি বলেন, আজ নরসিংদী যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু করোনার কারণে যেতে পারেননি। পরে সিলেট আসছি বললে তিনি জানান আমি ঢাকায় যাচ্ছি। এর বাইরে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। তিনি এখন কোথায় আছেন তাও জানি না।

বিষয়টি নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল নিহত বুলবুলের পরিবারকে আশ্বস্ত করে বলেন, আমরাও বুলবুল হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার চাই। আপনারা আমাদের ওপর আস্থা রাখেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি।
পরে দুপুর পৌণে ২টার দিকে মা-বোন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে সাদা মাইক্রোবাসে করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন নিহত বুলবুলের ভাই জাকারিয়া।

মাসুদ আহমদ রনি/আরআই