অভিযুক্ত শিক্ষক ড. মো. সাইফুল ইসলাম

সম্প্রতি নম্বর জালিয়াতির অভিযোগের কারণে বেশ আলোচনায় ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. সাইফুল ইসলাম। এবার স্ত্রীর করা নারী নির্যাতনের মামলাসহ অভিযোগের পাহাড় মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। আর তাকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। 

জানা গেছে, দুই সন্তানের মা প্রথম স্ত্রী স্মৃতি রাণী ভৌমিককে ডিভোর্স দিয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে সাইফুল ইসলাম ফের বিয়ে করেছেন এক সময়ের সহপাঠীকে। এবার সেই সহপাঠীর সঙ্গে ২৬ মাস সংসার করার পর যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের প্রধান। আগস্টের শেষ সপ্তাহে করা মামলার পর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও বিচার চেয়ে আবেদন করেছেন সাইফুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী মোছা.সোহেলী আক্তার। 

লিখিত অভিযোগে সোহেলী আক্তার উল্লেখ করেন, তাকে রংপুরের জমি বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় সাইফুল ইসলাম। তা না মানায় তার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালায়। এছাড়া সে অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে গভীর রাতে ভিডিও চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত থাকতেন। প্রতিবাদ করায় তার ওপর চলত নির্যাতন। 

সাংসারিক কলহের জের ধরে গেল ১৪ আগস্ট দ্বিতীয় স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করলে তার পরের দিন সেই স্ত্রী তার বাবার বাড়ি চলে যায়। চিকিৎসা নিয়ে ২৪ আগস্ট ময়মনসিংহের বাসায় এসে ঘরে প্রবেশ করতে না পেরে থানা পুলিশের কাছে গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। 

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, আমরা আনন্দমোহন কলেজের এক শিক্ষিকার নারী নির্যাতন ও যৌতুক নিয়ে করা মামলা নিয়ে কাজ করছি।  আসামি তার স্বামী সাইফুল ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে আনতে চেষ্টা প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পালিয়ে যাওয়ার পরও তার অবস্থান আমরা সনাক্ত করেতে পেরেছি। দ্রুতই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে।   

সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিকবার শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগে তদন্ত কমিটি হলেও শিক্ষক রাজনীতির প্রভাবে এখন পর্যন্ত কোনো তদন্তই আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গেও অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন এই শিক্ষক। 

এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে তার বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ আনেন স্নাতকোত্তর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ২০২০ সালের জুন মাসে এক শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একাধিকবার তদন্ত কমিটি হলেও তদন্ত প্রতিবেদন কিংবা দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। 

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক রাজনীতির প্রশ্রয়েই এ রকম কাজ করে যান অভিযুক্ত শিক্ষক। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের বাইরে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থীর সঙ্গেও অবৈধ সম্পর্কের কথা জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক। যা কয়েকজন শিক্ষক সমাধানে কাজ করেছেন।

মামলার পর অভিযুক্ত শিক্ষক ময়মনসিংহের বাসা থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ত্রিশালের একটি ছাত্রাবাসে। এই ঘটনা জানাজানি হলে ১ সেপ্টেম্বর ভোরে মেস থেকে চলে যান তিনি। পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, অভিযুক্ত এখন ঢাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন। 

শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর বলেন, আমরা তার বিরুদ্ধে করা মামলার কোনো নথি এখনো হাতে পাইনি। এছাড়া আমাদের শিক্ষক যদি গ্রেপ্তার হন কিংবা অপরাধী হন, আমরা তা জানা মাত্র বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাকে কিছু করতে পারি না। তবে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে এবং নৈতিক স্থলনের ব্যাপারটি প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কঠোর হয়ে আইনের বাস্তবায়ন করবে। বহিষ্কার তখনই হবে যখন আইনের কাছে প্রমাণ হবে। গ্রেপ্তার হলেই তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হবে এবং পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এদিকে ছুটি মঞ্জুর হওয়ার আগেই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদি উল্লাহ ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন এমন চিঠি দিয়েই পলাতক রয়েছেন ড. সাইফুল ইসলাম। তবে দায়িত্ব প্রাপ্তির কথা জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক মেহেদি উল্লাহ। একইসঙ্গে এখনো কোনো ছুটির চিঠি পাননি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর। 

তবে ফোকলোর বিভাগের কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম রানা বলেন, মেহেদি স্যারকে ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান করে ১৫ দিনের জন্য ছুটিতে যাওয়ার আবেদন সাইফুল স্যার বিভাগে রেখে গিয়েছিলেন যা আমি রেজিস্ট্রার ভবনে জমা দিয়েছি। আর মেহেদি স্যারও জানেন, তাকে বিভাগীয় প্রধান করার কথা। 

উবায়দুল হক/এসপি