জাবি ছাত্রলীগ নেতাদের ‘চাপে’ বন্ধ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ
ফাইল ছবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। ছাত্রলীগের নেতাদের চাপে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে নির্মাণ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. এনামুল হক এনাম, মাসুফ আহমেদ, মো. আসাদুজ্জামান আসাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরাফাত ইসলাম বিজয় ও সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকার।
বিজ্ঞাপন
এর মধ্যে মো. এনামুল হক এনাম, মাসুফ আহমেদ, আবদুর রহমান ইফতি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী এবং মো. আসাদুজ্জামান আসাদ, আরাফাত ইসলাম বিজয় ও চিন্ময় সরকার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিযে জানা যায়, গত ১৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলমান আল-বেরুনী হল সংলগ্ন খেলার মাঠের উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দেন ছাত্রলীগের নেতারা। তারা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী হল ও শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। আর এ হল দুটির মাঝে মাঠটির অবস্থান হওয়ার কারণে দুই হলের ছাত্রলীগ নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে টাকা দাবি করেন। অন্যথায় কাজ করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বিজ্ঞাপন
নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান অনিক ট্রেডিং করপোরেশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ১৮ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা আমাদের সাইট ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে দেখা করেন। তখন তারা আমাদেরকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর তারা আরও একবার দেখা করেছেন। তাদের নাকি নানা দাবি-দাওয়া আছে। আমরা এসব ব্যাপারে তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করেছি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাজ বন্ধ আছে। কাজ শুরুর ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি এখনো হয়নি।
এদিকে সম্প্রতি এসব চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে শহীদ সালাম বরকত হলের এক জুনিয়র নেতাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে এক সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে। হলটির জুনিয়র নেতারা দাবি করেন চাঁদাবাজির সকল অর্থ ভাগাভাগি করেন হলের সিনিয়র নেতারা। আর এ নিয়ে কৈফিয়ত দাবি করেন হলটির ৪৫ ব্যাচের নেতারা। এতে তাদের ওপর চড়াও হন সিনিয়র নেতারা। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ৪৫ ব্যাচের এক নেতাকে চড় মারেন হলটির এক সিনিয়র নেতা।
তবে কাজ বন্ধের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মো. এনামুল হক এনাম বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অসুবিধা নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম। আমাদের আল-বেরুনী হলের সঙ্গে কাজ হওয়ায় হলের শিক্ষার্থীদের অনেক সম্যসা হচ্ছিল। এছাড়াও এখানে কোনো বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছিল না। হলের রুমগুলোতে ধুলাবালিসহ শব্দে পড়াশোনার সমস্যা হচ্ছিল। কাজ বন্ধের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।
মো. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, কাজ কেন বন্ধ হয়েছে আমি জানি না। আমরা আমাদের সম্যসার বিষয়ে উনাদের সঙ্গে কথা বলেছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। অভিযোগের সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আল-বেরুনী হল সংলগ্ন মাঠের কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছিল। কিন্তু কিছু কারণে কাজটি বন্ধ রয়েছে। ঠিক কী কারণে বন্ধ আছে আমি বলতে চাচ্ছি না। আপনারা সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করলেই বুঝতে পারবেন কেন বন্ধ আছে। কাজ করতে এসে এ ধরনের বাধা পেলে আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আমরা কাজটি দ্রুত শেষ করে হস্তান্তর করতে চাই।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করতে বলেছি। কাজ করতে গিয়ে কোনো বাধা এলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটা দেখবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, শুনেছি মাঠের কাজ বন্ধ আছে। আমি কথা বলে কাজ শুরুর ব্যবস্থা করছি।
মো. আলকামা/এমজেইউ