অভিযুক্ত ইডেন কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রী নুজহাত ফারিয়া রোকসানা /ছবি- সংগৃহীত

আবারো আলোচনায় রাজধানীর ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডের কারণে কিছুদিন আগে সেখানকার কমিটির ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দুই মাস না যেতেই আবাসিক শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম নুজহাত ফারিয়া রোকসানা। তিনি ইডেন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও গণিত বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি ইডেন ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার অনুসারী।

মারধরের শিকার শিক্ষার্থীর নাম মহুয়া। তিনি ইডেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

তার অভিযোগ, কলেজের হলে বহিরাগত শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে টাকার বিনিময়ে বসবাসের সুযোগ দেওয়ার প্রতিবাদ করায় রোকসানার আক্রোশের শিকার হয়েছেন তিনি।

এ ঘটনার পর রোকসানার নির্যাতনের বিচার ও প্রতিকার চেয়ে হল সুপারের কাছে আবেদন করেছেন হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অভিযোগপত্রের একটি কপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।

অভিযোগপত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ইডেন কলেজের বঙ্গমাতা হলের ৫ম তলায় আবাসিক শিক্ষার্থী মহুয়াকে মারধর করা হয়। এসময় আমরা (সাধারণ শিক্ষার্থীরা) উপস্থিত ছিলাম। সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রোকসানা আক্তার ওই শিক্ষার্থীকে নির্যাতন শুরু করে। তার (মহুয়ার) চিৎকার শুনে আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। রোকসানা আমাদের সামনে স্ট্যাম্প (ক্রিকেট খেলায় ব্যবহৃত স্ট্যাম্প) দিয়ে মহুয়াকে পেটান। তার জামা-কাপড় ও চুল ছিঁড়ে ফেলেন। বঁটি দিয়ে কোপাতে উদ্যত হন।

এ সময় রোকসানা ৫ম তলার প্রতিটি শিক্ষার্থীর সিট কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেন। ৫ম তলার সব শিক্ষার্থী রোকসানার অত্যাচারের শিকার। আমরা এর স্থায়ী সমাধান ও বিচার চাই।

পরে আমরা জানতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করেন এমন বহিরাগত শিক্ষার্থীদের হলে টাকার বিনিময়ে স্থায়ী সিট দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেত্রী রোকসানা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মহুয়া বৈধ শিক্ষার্থী হয়েও এক বছর ধরে রোকসানার কক্ষে প্রতিদিন অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এর প্রতিবাদ করায় তাকে এমন নিষ্ঠুরভাবে পেটানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের কিছু ছবিও ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে। যেখানে দেখা যায়, ওই শিক্ষার্থীর হাতের কয়েকটা আঙুল কেটে গেছে। নির্যাতনের সময় শিক্ষার্থীর গায়ে পরিহিত জামাও কয়েক জায়গায় ছেঁড়া। পিঠে আঘাতের চিহ্ন (ছবিগুলো প্রকাশযোগ্য নয়)।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঙ্গমাতা হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রলীগের রোকসানা জুনিয়র মেয়েদের দিয়ে নিজের কাজ করান। এমনকি তিনি যখন বের হন তখন জুতা পর্যন্ত মেয়েদের পরিয়ে দিতে হয়। মাঝেমধ্যে হাত-পা টেপান। ঘটনাস্থলে আমিও ছিলাম। রোকসানা আপু ওই মেয়েকে পিটিয়েছেন। তিনি সব সময়ই এ রকম করেন। মেয়েদের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালান। কথা না শুনলে গালিগালাজ করেন, রুম থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। টাকার বিনিময়ে মেয়েদের হলে ওঠান। বহিরাগতদেরও হলে রাখেন।

ওই শিক্ষার্থী আরও জানান, বঙ্গমাতা হলের ৫ তলার সব শিক্ষার্থী রোকসানার ভয়ে তটস্থ থাকেন। তিনি সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। কিছু বললেই স্ট্যাম্প দিয়ে মারতে যান। আজ ওকে বঁটি দিয়ে কোপাতে গেছেন, ওর ঘাড়ে কোপ দিয়েছিল। আমরা না ধরলে ওর শরীরে কোপ লাগত।

তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্র বলে জানান অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী নুজহাত ফারিয়া রোকসানা। 

ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘যে মেয়েকে নিয়ে কথা হচ্ছে সে আমার রুমমেট। ছোট বোন। তার সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই। জাস্ট একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। এখন আপনারা বলছেন স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হয়েছে। আপনারা চাইলে ওকে দেখতে পারেন বা ওর সঙ্গে কথাও বলতে পারেন। নির্যাতনের বিষয়টি সত্য নয়। রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় করার জন্যই এত মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে। এটা ঠিক নয়।’

এসব বিষয়ে জানতে ইডেন মহিলা কলেজের শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ছাত্রীনিবাসের তত্ত্বাবধায়ক নাজমুন নাহারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যকে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।

কথা বলেননি ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভাও। মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল কেটে দেন।

ইডেনের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই রোকসানা আগেও মারধর করতেন শিক্ষার্থীদের। হলের সিট দখল করতে শিক্ষার্থী পিটিয়ে গত বছরও আলোচনায় ছিলেন তিনি। এসব কারণে গত বছরের ১১ এপ্রিল রোকসানাকে কলেজ ও ছাত্রীনিবাস থেকে বহিষ্কারের জন্য অধ্যক্ষ এবং তত্ত্বাবধায়কের কাছে আবেদন করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে রোকসানাকে ছাত্রীনিবাস থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও নেয় ইডেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে অদৃশ্য কারণে বহিষ্কারের সেই সিদ্ধান্ত আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি কলেজ প্রশাসন।  

আরএইচটি/ওএফ