ভাষার মাসে মহান শহীদদের স্মরণে সারা দেশের প্রায় ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেড় হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো ‘দ্বাদশ আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াড ২০২৩’। প্রতি বছরের মতো এবারও প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী ক্যাম্পাস উত্তরায় স্কুল প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী প্রোগ্রামটি অনুষ্ঠিত হয়। এবছর ৭০টি স্কুলের ৯০টি শাখা অংশগ্রহণ করেছে। 

জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিচারক এবং উপদেষ্টাবৃন্দ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। 

৭টি ক্যাটাগরিতে (লেখা, আবৃত্তি, নাচ, গান, অঙ্কন, কুইজ এবং উপস্থিত বক্তৃতা) প্রতিযোগীরা বয়সভেদে অংশগ্রহণ করে। তবে এখন শুধু প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে, ফলাফল এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি আগামী ১১ মার্চ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। 

প্রতিযোগিতায় উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মশিউর রহমান, বাংলা অলিম্পিয়াডের উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. হাকিম আরিফ, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজীর লিটন।

এছাড়া বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সম্প্রতি একুশে পদকজয়ী মনোরঞ্জন ঘোষাল, বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ, আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মুস্তাফা, আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম, আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী, আবৃত্তিশিল্পী রেজিনা ওয়ালী লীনা, বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী চন্দনা মজুমদার, কিরণচন্দ্র রায়, প্রিয়াঙ্কা গোপ, সরকারি সঙ্গীত কলেজের শিক্ষক কমল খালিদ, ইউনুসুর রহমান, নৃত্যশিল্পী সাজু আহমেদ, সামিনা হোসেন প্রিমা প্রমুখ।  

উল্লেখ্য, গত ১o ডিসেম্বর থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। 

অলিম্পিয়াড সম্পর্কে জানতে চাইলে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল রোকসানা জারিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বারের মতো এবারও ভাষা মাসে বাংলা ভাষা চর্চা ও বাংলা সংস্কৃতি বিষয়ে আগামী প্রজন্মকে সঠিক ধারণা দিতে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। আমরা মনে করি, এত বড় একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আমাদের স্কুল বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলা অলিম্পিয়াড ইংরেজি স্কুলগুলোর একটি জাতীয় প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। শুধু জাতীয় নয়, আমি বলব, বাংলা অলিম্পিয়াড ছড়িয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। প্রতি বছরই দেশি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুলের বিদেশি শিক্ষার্থীরাও বাংলা অলিম্পিয়াডে যোগ দিচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশের ইংরেজি মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্শন স্কুলগুলো ভাষার মাসে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। ভাষার মাসে বাংলা ভাষা নিয়ে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অনুষ্ঠানমালায় এটিই দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন। বাংলা অলিম্পিয়াড এটাই প্রমাণ করে যে বাংলা ভার্সের পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চায় এখন অনেক অগ্রসর।  

এ বিষয়ে বাংলা অলিম্পিয়াডের সমন্বয়ক কামরুল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে বাংলা অলিম্পিয়াড দেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। গত এক যুগ ধরে আয়োজিত বাংলা অলিম্পিয়াড দেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি তাদের যে ভীতি ও বিতৃষ্ণা ছিল, সেটা বাংলা অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে অনেকটাই কেটে গেছে। এখন দেশের বড় বড় স্কুলগুলো সারা বছর আমাদের বাংলা অলিম্পিয়াডের জন্য অপেক্ষায় থাকে। বাংলা অলিম্পিয়াডে পুরস্কৃত হওয়া ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে বিরাট সম্মানের একটি অর্জন বলে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলা অলিম্পিয়াডে পুরস্কৃত শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিজীবনেও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে নিজেদের সংযুক্তি বাড়াচ্ছে। অনেকে গান, আবৃত্তিসহ বাংলা সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গে অত্যন্ত দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে অনেকেই বড় হয়ে বড় লেখক হবেন, বড় শিল্পী হবেন এবং দেশ-বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শিল্প অঙ্গনে বাংলা অলিম্পিয়াড উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাসী।

প্রসঙ্গত, ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি এই স্কুলটি সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিভিত্তিক চর্চায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে।

এসআই/এমএ