কুবি প্রশাসনের অনুদানে ‘মুজিববর্ষ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট’ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয় শাখা ছাত্রলীগকে

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুদানে ‘মুজিববর্ষ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট- ২০২১’ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শাখা ছাত্রলীগকে। প্রশাসনের অনুদানে এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হলেও এতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না ছাত্রলীগের বাইরে কেউ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) উদ্বোধন হওয়া এ টুর্নামেন্টে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও জার্সিতে রয়েছে ছাত্রলীগের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক তিনটি ছাত্র হল থেকে সর্বমোট আটটি দল খেলায় অংশগ্রহণ করতে নাম নিবন্ধন করে। সাত বীরশ্রেষ্ঠ ও ভাষাসৈনিক শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে নামাঙ্কিত এসব দলে নেই কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীর নাম।

শুধুমাত্র শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই এতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগ টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়দেরও এ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের খেলতে না দিয়ে ‘প্রশাসন বৈষম্য তৈরি করেছে’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

গত বছর আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগ টুর্নামেন্টের একাধিক দলের অধিনায়কের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধিনায়ক বলেন, ‘প্রশাসন কর্তৃক শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত মুজিববর্ষ টুর্নামেন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো টপ পারফর্মার নেই। শুধু ছাত্রলীগ না করায় বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এটি নিঃসন্দেহে টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য হারাবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ছাত্রলীগের জন্য ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও ছাত্রলীগের বাইরে কেউ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। প্রশাসনের এমন বৈষম্যমূলক আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’

এদিকে এ টুর্নামেন্টের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে— তা জানেন না অর্থ দফতরের পরিচালক। বরাদ্দের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। আপনারা ছাত্রলীগকে জিজ্ঞেস করেন, কত টাকা বাজেট দেওয়া হয়েছে।’

দফতরের  পরিচালক হিসেবে তার এ তথ্য জানা থাকা দরকার কি না— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো তথ্য দিতে পারব না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক শিক্ষকের নামে একটি চেক অনুমোদন হয়েছে। মূলত সেই টাকা থেকেই এ টুর্নামেন্টের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ক্রীড়া পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ড. শামিমুল ইসলাম বলেন, এ টুর্নামেন্ট সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নামে একটি আবেদনপত্র এসেছিল। সেই হিসেবেই বরাদ্দ দেওয়া হয়। তারা খেলতে না পারলে বিষয়টা খুবই দুঃখজনক।

এদিকে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ এ টুর্নামেন্টকে নিজেদের দলীয় টুর্নামেন্ট দাবি করে বলেন, এ টুর্নামেন্টের বাজেটের ৭৫ পার্সেন্ট টাকা ছাত্রলীগ ম্যানেজ করেছে। এটা ছাত্রলীগের দলীয় টুর্নামেন্ট। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এতে সহযোগিতা করেছে মাত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন আয়োজন সরাসরি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনকে দেওয়া যায় কি না কিংবা রাজনৈতিক সংগঠনের দলীয় আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অর্থায়ন করতে পারে কি না— মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী এখন কথা বলতে পারবেন না বলে কল কেটে দেন।

এমএসআর