রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে অধ্যক্ষের বাসভবনের ছাদে উঠে আম পাড়তে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক কর্মচারী মারা গেছেন। নিহত ওই কর্মচারীর নাম চান্নু বিশ্বাস (৪২)। তিনি টিটি কলেজের শিক্ষার্থী পরিবহনের বাসের চালক হিসেবে বেসরকারি কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চান্নু বিশ্বাস সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. গোলাম ফারুকের ব্যক্তিগত গাড়িও চালাতেন।

জানা গেছে, শুক্রবার (১২ মে) বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে কলেজের আবাসিক এলাকায় অধ্যক্ষের বাসভবনের ছাদে উঠে অ্যালুমিনিয়ামের পাইপ দিয়ে গাছ থেকে আম পাড়তে যান তিনি। এ সময় ছাদের ওপরের বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে ঢামেকের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনার পর অভিযোগ ওঠেছে, আমগাছ থেকে যেন শিক্ষার্থীরা আম পাড়তে না পারেন সেজন্য অধ্যক্ষ কর্মচারীদের দিয়ে আগেভাগেই সকল ফল সংগ্রহ করাতেন। তারই ধারাবাহিকতায় ওই কর্মচারীকে জোর করে তার বাড়ির গাছে উঠানো হয়েছে।

>> আম পাড়তে গিয়ে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গাড়িচালকের মৃত্যু

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, বর্তমান অধ্যক্ষ তার খুশিমত কলেজ পরিচালনা করেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সাথে সবসময় রূঢ় আচরণ করেন। নির্ধারিত দায়িত্বের বাইরেও কর্মচারীদের নানা রকম কাজ করান। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির অফিস সহায়ক কর্মচারীদের দিয়ে কলেজের ড্রেনও পরিষ্কার করিয়েছেন তিনি। শুক্রবার তার বাসভবনের ভেতরে নিশ্চিত ঝুঁকি জেনেও একজন কর্মচারীকে গাছে তুলে দেওয়া হলো। নিহত ড্রাইভার মামাও আমাদের প্রায়ই বলতেন অধ্যক্ষের জোরাজুরিতে তাকে গাছের আম, ডাব, কাঁঠাল পাড়তে হয়। শুধু চাকরি হারানোর ভয়ে ড্রাইভার হয়েও তিনি এসব কাজ করতেন।

আসিফ আলি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, কলেজের বাস ড্রাইভার বিকেলে অধ্যক্ষের নির্দেশে তার বাসভবনের ভেতরে গাছের আম পাড়তে গিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এই ঘটনার পুরো দায় অধ্যক্ষকে নিতে হবে। কেন তিনি ব্যক্তিগত কাজে কলেজের বাস ড্রাইভারকে গাছে তুলে দিলেন। ইতোপূর্বেও নিহত কর্মচারীকে বিভিন্ন সময় কলেজের বিভিন্ন গাছে উঠতে তিনি বাধ্য করেছেন।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. গোলাম ফারুক। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ছেলেটা গাছে ওঠার ব্যাপারে একটু পারদর্শী ছিল। প্রায়ই বিভিন্ন গাছে উঠত। আমি বরং এ কাজে তাকে নিরুৎসাহিত করেছি। এ ঘটনার সময় আমি বাইরে ছিলাম। জানতে পেরে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।

তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং আমরা নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করছি।

আরএইচটি/ওএফ