দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।বর্তমান ও সাবেক এসব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ’। গত বছরের ২১ জুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া সংগঠনটি এখন পর্যন্ত ২৪০টি নিরাপত্তাজনিত অভিযোগ সমাধান করেছে।

সংগঠনটি অর্ধশত শিক্ষার্থীকে আত্মহত্যাসহ বিভিন্ন জটিলতা থেকে উদ্ধার করেছে। এছাড়াও প্রায় অর্ধশত মানুষকে আত্মহত্যার হাত থেকে রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি সংগঠনটির অনলাইন গ্রুপে পোস্ট করে অসংখ্য মানুষ পরামর্শ লাভের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে বলে জানা যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে আজিমপুরে একটি মেসে মালিকের অত্যাচারে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া ঢাবি ছাত্রীদের পাশে থাকা, মরণব্যাধিতে আক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমির চিকিৎসা ব্যয়ে সহযোগিতা করা, বগুড়ায় হত্যার উদ্দেশে অপহরণ করা ঢাবি শিক্ষার্থীর বাবাকে রক্ষা করা, গাইবান্ধায় ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শিক্ষার্থীর পাশে থাকাসহ শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, সাইবার বুলিং, ইভটিজিং, জমি সংক্রান্ত সমস্যা, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হামলা-মামলা, ছিনতাই, শিক্ষার্থী হয়রানি সংক্রান্ত বিষয়সহ বিভিন্ন মাণবিক বিষয়ে কাজ করতে দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চকে।

বেশ কয়েকটি অভিযোগ দক্ষতার সঙ্গে সমাধান করেছে নিরাপত্তা মঞ্চ। সমাধান পাওয়া শিক্ষার্থীরাও জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা। ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বোন বাড্ডা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের কাছে নিয়মিত ইভটিজিংয়ের শিকার হত। প্রতিবাদ করলে হুমকির শিকার হই। এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে ঢাবি নিরাপত্তা মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়াস সিজার তালুকদার আমাকে সহযোগিতা করেন।

সাখাওয়াত হোসেন তুহিন নামে আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, আমি নিজের সমস্যার সমাধান পেয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে চির ঋণী হয়ে গেলাম। আজ ঢাবিয়ান বলে গর্ববোধ করছি, নিরাপদ থাকুক ঢাবি পরিবার।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক জিএস জুলিয়াস সিজার তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈচিত্র্যের মাঝে যে ঐক্য, সেই ঐক্য সবচেয়ে সুন্দর। আমদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা দলের, নানা মতের শিক্ষার্থী রয়েছে। এই বৈচিত্র্যের মাঝেই আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম করেছি যার নাম ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা নিরাপত্তাজনিত ছাড়াও বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। আমরা ঢাবি পরিবার একে অপরের পাশে থাকা কর্তব্য বলেও মনে করছি।

কেন এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন অনুভব করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হিংসা ও পরশ্রীকাতরতার শিকার হোন। করোনাকালে এটি আরও তীব্র রূপ ধারণ করেছে। ২০২০ সালের ১৯ জুন টাঙ্গাইলে একজন ঢাবি শিক্ষার্থীর খুনের ঘটনায় একটি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেই। ২১ জুন থেকে এর কার্যক্রম শুরু করি। ধর্ম কিংবা দলীয় পরিচয় নয় বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়কে আমরা প্রধান এবং শ্রেষ্ঠ পরিচয় বলে মনে করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের ভবিষ্যৎ নিয়ে জুলিয়াস সিজার তালুকদার বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ভবিষ্যতে আরও আন্তরিক ও বস্তুনিষ্ঠটার সঙ্গে আমরা এই কাজ করতে চাই।

সহ-প্রতিষ্ঠাতা আরাফাত চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যা বা যৌক্তিক প্রয়োজনে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। সংগঠন শুরু করার কয়েকদিন পর থেকেই আমি এর সঙ্গে যুক্ত আছি। মানুষের ভালোবাসাই আমাদের প্রতিনিয়ত উৎসাহ যোগায়।

এইচআর/এমএইচএস