চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সেলের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

লিখিত অভিযোগে ওই শিক্ষার্থী জানান, আমি জৈব রসায়ন শাখায় মাস্টার্সে অধ্যয়নরত এবং মাস্টার্সের থিসিস করছি। আমার সুপারভাইজার কর্তৃক আমি যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হই। থিসিস শুরুর পর থেকে আমার সঙ্গে তিনি বিভিন্নরকম যৌন হয়রানি মূলক আচরণ করেন। জোর করে হাত চেপে ধরা, শরীরের বিভিন্ন অংশে অতর্কিত ও জোরপূর্বক স্পর্শ করা, অসংগত ও অনুপযুক্ত শব্দের ব্যবহার করা। কেমিকেল আনাসহ বিভিন্ন বাহানায় আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে তিনি জোরপূর্বক জাপটে ধরতেন তিনি। বিগত ৬ জানুয়ারি আনুমানিক সকাল ১০টা ১০ মিনিটে আমাকে একা পেয়ে তিনি ল্যাবে প্রবেশ করেন তার অনেক ঠান্ডা লাগছে এই কথা বলে আমাকে আবার জড়িয়ে ধরেন। এমতাবস্থায় আমি তাকে ধাক্কা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নেই এবং তৎক্ষণাৎ আমার ল্যাবম্যাটের কাছে এসে কোনোরকমে বেঁচে যাই। তারপর আমি ও আমার ল্যাবের বাকি মেয়েরা মিলে ল্যাবে আর একা না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।

অভিযোগ পত্রে ওই শিক্ষার্থী লিখেছেন, গত ১৩ জানুয়ারি আনুমানিক ১২টা নাগাদ তিনি আমাকে কেমিকেল দেওয়ার বাহানা করে রুমে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ফ্রিজ থেকে কেমিকেল বের করা অবস্থায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন, তার হাত ও ঠোঁট দিয়ে আমার গোপনাঙ্গে স্পর্শ করেন এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে অনাকাঙ্খিত স্পর্শ করেন। আমি তাকে ধাক্কা মেরে রুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তিনি দরজা বন্ধ করে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। আমি ধ্বস্তাধস্তি করে উনার রুম থেকে আত্মরক্ষা করে পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হই। আমি তৎক্ষণাৎ বিষয়টি আমার ল্যাবের বাকি দুজন মেয়েকে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অবগত করি। প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে তারাও এমন অনাকাঙ্খিত আচরণের শিকার হয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখেন, পরবর্তী দিন থেকে তিনি আমাকে ও আমার ল্যাবম্যাট বাকি দুজনকে রুমে ডেকে নিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন বিষয়টি কাউকে প্রকাশ না করার জন্য এবং তার সঙ্গে মধ্যস্থতায় আসার জন্য আমাদের ৩ জনকে প্রায় ২৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে জোরপূর্বক তার রুমে আটকে রাখেন। আমরা বের হতে চাইলে তিনি রুমের দরজা আগলে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং আমাদের বলেন যেকোনো ধরনের মধ্যস্থতা ছাড়া তিনি আমাদের তার রুম থেকে বের হতে দেবেন না। আমি খুব অসুস্থবোধ করায় আমার ল্যাবমেটরা উনাকে বারবার রুম হতে বের হতে দেওয়ার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি আমাদের বের হতে দেননি। আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই জঘন্যতম ঘটনার কারণে আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। তাই আমার দৈনন্দিন ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় আমি আমার থিসিস ল্যাবে নিরাপত্তাহীনতা ভুগছি এবং এই ল্যাবে পরবর্তী থিসিস কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।

এ বিষয়ে চবির সহকারী প্রক্টর সৌরভ সাহা জয় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। উপাচার্য ম্যাম দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার সত্যতা পেলে আমরা কোনো ছাড় দেব না। এছাড়া আমাদের ছাত্রী যদি কোথাও আইনের আশ্রয় নিতে চায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জরিন আখতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আগামীকাল আমরা যৌন নির্যাতন সেলের সদস্যদেরকে নিয়ে বৈঠকে বসবো। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তদনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই শিক্ষার্থী যেসব অভিযোগ তুলেছে তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কখনো চাইবো না বুড়ো বয়সে নিজের সম্মান হারাতে। আমি একজন শিক্ষক ও গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৩০ বছর ধরে চাকরি করছি। এটি আমার কর্মের ক্ষেত্র, ধর্মের ক্ষেত্র। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বদনাম হোক সেটা আমি চাইবো না।

তিনি আরও বলেন, ওই শিক্ষার্থী চিঠিতে উল্লেখ করেছে যে ৬ জানুয়ারি আমি নাকি তার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছি অথচ নির্বাচনের দিন (৭ জানুয়ারি) হল বন্ধ থাকায় কয়েকজন মিলে আমার বাসায় খাওয়া ধাওয়া করেছে। সত্যিই যদি ৬ তারিখ তার সাথে বাজে ব্যবহার করি তাহলে সে কীভাবে পরদিন আমার বাসায় আসে? আমি কখনো কল্পনাও করিনি এমন একটি দিন দেখতে হবে আমাকে। আমি মিথ্যার অভিযোগে শাস্তি পাচ্ছি। আমি নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবো।

এমএএস