ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে দিনভর উত্তাল ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যাল্যালয় (ইবি)। শিক্ষক-কর্মকর্তারা নিয়োগ বন্ধের দাবি জানান। তবে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একাংশ নিয়োগের পক্ষে ছিলেন। এ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন শিক্ষকদের একাংশ ও ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষকদের একাংশকে গালাগাল ও লাঞ্চিত করেছেন বলে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে নিয়োগ কার্যক্রম ও প্রমোশন বোর্ড শুরু হয়ে সন্ধ্যায় শেষ হয়।

নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন ইবি উপাচার্য ড. শেখ আব্দুল সালাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূইয়া, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন, ইবির সিন্ডিকেট সদস্য ও আরবি বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউসুফ, ইবির ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী।

কোনো নিয়োগের ব্যাপারে বিব্রতকর পরিবেশ কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। ইমাম নিয়োগ বোর্ড শেষে তিনি বলেন, অনেক আগ্রহের সঙ্গে ইবিতে এসেছিলাম কষ্ট করে। তবে এখানে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। এখানে যেটা হয়েছে সেটা কাম্য নয়।

তিনি বলেন, কোনো নিয়োগের ব্যাপারে এ ধরনের পরিবেশ তৈরি না হোক। ইমাম নিয়োগের ব্যাপারে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম বলেন, আমরা ন্যায্যতার ভিত্তিতে এ নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন করেছি। সরকার যতদিন আমাদের এ চেয়ারে রাখবে, আমরা ততদিন এ প্রক্রিয়া চালু রাখব। যারা বাধা দিয়েছে তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।

জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের দুর্নীতির বিচারের মধ্যেও নিয়োগ বোর্ড ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগের বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নিয়োগ বন্ধ করতে কর্মকর্তারা চাকরির বয়সসীমা ৬২ বছরে উন্নীতকরণ, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তিতে পোষ্য কোটায় মার্ক শিথীলকরণসহ ১৩ দফা দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ড বন্ধ রাখার দাবি জানান।  একপর্যায়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যান কর্মকর্তারা। এসময় উপাচার্যকে নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবি জানান ও বাগবিতণ্ডায় জড়ান।

এরপর উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকরা উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এসময় তারা উপাচার্যের নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ইউজিসি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার নিয়োগের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ বন্ধ রাখার দাবি জানান। একপর্যায়ে উপাচার্য ও শিক্ষকরা বাকবিন্ডায় জড়ান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শাপলা ফোরাম ও শিক্ষক সমিতির একাংশ শিক্ষকদের গালাগাল এবং শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। তবে নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রাখার দাবি জানান উপাচার্যপন্থি শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।

এ ঘটনার পর শিক্ষক সমিতি এবং শাপলা ফোরামের শিক্ষকদের একাংশ মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তারা শিক্ষক সমাজকে লাঞ্চনার প্রতিবাদ জানান। এসময় ড. মাহবুবর রহমান, ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ, ড. শেলীনা নাসরিন, ড. মাহবুবুল আরেফিনসহ অন্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ইমাম নিয়োগ সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদের একটি কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ বলেন, ‘যেটি ভাইরাল হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ ফেক। যারা এমনটি করেছে তাদের বিচার দাবি জানাই।’

ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দীকি আরাফাত বলেন, আমরা কখনো নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। সুষ্ঠুভাবে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান থাকুক।

কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালীদ হাসান মুকুট বলেন, কর্মকর্তাদের নায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, আমরা কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। এসময় বহিরাগত পেটুয়া বাহিনী দিয়ে আমাদেকে লাঞ্চিত করেন। নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। এর বিচারের দাবি জানাই। এ ছাড়া উপাচার্যের অর্থ লেনদেনের দুর্নীতির বিচার না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখার আহ্বান জানাই।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রমাণ থাকলে তারা সেটি সো করুক। তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এসব করছেন।

শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ বলেন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। আজকের নিয়োগ নিয়েও অভিযোগ ছিল। যে অডিওগুলো ভাইরাল হয়েছে তাতে স্পষ্ট উপাচার্য ও তাদের পক্ষের শিক্ষকদের নাম এসেছে। তিনি বঙ্গবন্ধু চেয়ার নিয়োগের দিকে যাচ্ছেন না। যেখানে টাকা আছে সেসব নিয়োগে তৎপর উপাচার্য।

এসএসএইচ