নির্বাচনে শক্তিধর রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রও সফল হয়নি : ঢাবি ভিসি
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ এদেশের সব মানুষের অন্তরে আছে বলেই বিগত নির্বাচনে শক্তিধর রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রও সফল হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন টিকে আছে বলেই এখনও বাংলাদেশ টিকে আছে। এমনকি এ কারণে দেশে এখনও আওয়ামী লীগ টিকে আছে এবং অসাম্প্রদায়িকতা টিকে আছে।
শনিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্প্রীতির বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাঙালি অস্তিত্বের উৎস বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বাংলাদেশের শিক্ষানীতি করার জন্য ড. কুদরত-ই-খুদাকে প্রধান করে কমিশন করেন। ড. কুদরত-ই-খুদা সেদিন যে শিক্ষানীতি দিয়েছিলেন যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন এবং সেই শিক্ষানীতি যদি প্রয়োগ হতো তাহলে বাংলাদেশ আজকে যে অবস্থানে আছে তার বহু আগেই সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক যে স্থিতিশীলতা সেটি বাংলাদেশ অর্জন করতো।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি এখন পর্যন্ত বেঁচে থাকতেন, তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রেও সিঙ্গাপুরের যে অগ্রগতি, সেটি বহু আগেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র অর্জন করতো। কিন্তু ঘাতকরা সেটি হতে দেয়নি। ঘাতকরা চেয়েছে বাংলাদেশ হবে পাকিস্তানের মতো অনেকটা মৃত অকার্যকর রাষ্ট্রের মতো। সেই রাষ্ট্রের যে ধ্যান ধারণা ছিল সেই ধ্যান ধারণার মতো বাংলাদেশ চলবে। সেজন্যই ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহকর্মীদের হত্যা করে এবং আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দলকে হত্যা করার পাঁয়তারা করে।
বিজ্ঞাপন
মাকসুদ কামাল বলেন, যে দলের জন্ম বঙ্গবন্ধু, যে দলের অস্তিত্বের মধ্যে আছে বঙ্গবন্ধু, যে দলের উৎস হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর অসাম্প্রদায়িকতা, সেই দলকে কখনও ধ্বংস করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু, তার পরিবার এমনকি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অনুসারীদের হত্যা করলেও যে আদর্শ মানুষের অন্তরে আছে, সে আদর্শকে কখনই হত্যা করা যায় না। সেটির প্রমাণ হলো আজকে বারবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন, অর্থনৈতিক দর্শন, সামাজিক দর্শন এবং বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি সেটি বাস্তবায়ন হতে চলেছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার মধ্যেও বঙ্গবন্ধুর গবেষণা চলছে। তিনি এখনো আমাদের কাছে অতিপ্রয়োজনীয়। একটি জাতিকে তিনি মুক্ত করেছেন অপরিসীম দুঃখ, কষ্ট ও ত্যাগ সহ্য করে। অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করে তিনি বাঙালির স্বাধীনতা এনেছেন। বাঙালির জীবনে অনেক বরেণ্য ব্যক্তি এসেছে। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধু শ্রেষ্ঠ বাঙালি হয়েছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাঙালির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি। সাড়ে সাত কোটি নির্যাতিত, বৈষম্যের শিকার হওয়া মানুষকে তিনি সুসংগঠিত করেছেন। সংগঠিত করে তিনি একটি জাতির স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। স্বাধীনতা এনে দিয়ে তিনি বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন বাঙালি পিছিয়ে পড়া জাতি নয়। বিশ্বের মাঝে বাঙালি জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সাহস দিয়েছেন।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবনভর বৈষম্যহীন একটি জাতির কথা বলে গেছেন। ভাষার জন্য লড়াই করেছেন, জাতিসত্তার জন্য লড়াই করেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা তিনি মুখেই বলেছেন এমনটা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা তিনি সংবিধানেও সংযোজন করেছেন।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া, বঙ্গবন্ধু গবেষক মেজর (অব.) হাফিজুর রহমানসহ প্রমুখ।
টিআই/জেডএস