ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলার ২৫০ নম্বর রুমে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ হতাহত না হলেও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে যাওয়াসহ হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের তৎপরতায় ২০ মিনিট পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। 

সোমবার (৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে এই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বলে শিক্ষার্থী ও হল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও হল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঈদে ছুটিতে সব শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যাওয়ায় জহুরুল হক হলের ২৫০ নাম্বার রুমে কেউ অবস্থান করছিল না। রাত সোয়া ২টার দিকে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগলে রুমে থাকা শিক্ষার্থীদের বই, সার্টিফিকেট, তিনটি ট্রাঙ্ক, টেবিল চেয়ারসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে যায়। এসময় হলের অন্যান্য রুমের শিক্ষার্থীরা রুমের দরজা ভেঙে পানি ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সাহায্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার ১৫ মিনিট পর তারা উপস্থিত হয় বলে শিক্ষার্থীরা জানান। 

আগুন লাগার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ২৬১ নম্বর রুমে থাকা শিক্ষার্থী সাব্বিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত সোয়া দুইটার দিকে ২৫০ নম্বর রুমটিতে আগুন লাগে। রুমের সবাই ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ায় রুমটি তালাবদ্ধ ছিল। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে রুমটির তালা ভেঙ্গে আমরা ভেতরে পানি আর অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। এর মধ্যেই তিনটি ট্রাঙ্কসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, বই, খাতা, জামা-কাপড় পুড়ে যায়। 

তিনি বলেন, রুমটিতে চারজন থাকত। এর মধ্যে দুজনের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে যায়। বাকিদের কাগজপত্র আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই বের করা সম্ভব হয় বলে সেগুলো পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের সিনিয়ররা ফায়ার সার্ভিসকে বিষয়টি অবহিত করে। তবে আমরা আগুন নেভানোর প্রায় ১৫/২০ মিনিট পরে তারা হলে উপস্থিত হয়।

আগুন লাগার বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দীন রানা বলেন, শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে বন্ধ রুমটিতে আগুন লেগে যায়। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা আগুন নেভাতে ছুটে যাই। শিক্ষার্থীদের চেষ্টায় ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দুর্বল ইলেকট্রনিক লাইন, সাধারণ তারে ভারী ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করার ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও রুম ছেড়ে যাওয়ার সময় রুমের জিনিসপত্র ঠিক আছে কিনা সেটাও যাচাই করে নেওয়া উচিত ছিল। নাহলে বড় রকমের কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। 

এ বিষয়ে হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম বলেন, রাত ২টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে আমি তৎক্ষণাৎ সেখানে যাই। ফায়ার সার্ভিসকেও বলা হয়েছিল এবং তারা এসেছিল। তবে তারা আসার আগেই শিক্ষার্থীরা আগুন নিভিয়ে ফেলেছিল। 

তিনি বলেন, রুমে আগুন লাগার পেছনে শিক্ষার্থীদের অসচেতনতা দায়ী। তাছাড়া ইলেকট্রনিক লাইনের ত্রুটি থাকতে পারে। তবে ইলেকট্রনিক লাইনে দুর্বলতা থাকলে হল অফিসে বললেই আমরা হলের ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে ঠিক করে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। তাছাড়া বাড়ি যাওয়ার আগে রুমটিকে গুছিয়ে যাওয়াটা শিক্ষার্থীদের কর্তব্য। এখন তাদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা তো পুষিয়ে উঠা বেশ কষ্টের। অনেকের তো সার্টিফিকেটও পুড়ে গেছে। বিষয়টি দুঃখজনক। তবে শিক্ষার্থীদের ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার আগে রুমের লাইট, ফ্যান ও ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করে যাওয়া উচিত।

কেএইচ/পিএইচ