ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর সঙ্গে এলএসডি নামে ভয়ঙ্কর এক মাদকের যোগসূত্র পাওয়ার পর মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

প্রশাসনের তথ্য মতে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রসহ (টিএসসি) ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে এখন পর্যন্ত পাঁচটি মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। যেখান থেকে ২০-২৫ জনকে আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে শাহবাগ থানা ও প্রক্টরিয়াল টিম যৌথভাবে অভিযানগুলো চালায়।

সর্বশেষ বুধবার (১৬ জুন) মধ্যরাতে অভিযান চালায় প্রশাসন। এ সময় মাদক সংশ্লিষ্ট কাউকে আটক করতে না পারলেও এর আগে গত (১৪ জুন) অভিযান চালিয়ে সাত বহিরাগতকে আটক করা হয়। তারা হলেন- আরমান (১৮), মাসুম (২৪), ইলিয়াস (১৫), পারভেজ (১৭), মিঠু (২৫), ইমন (২৫), লিটু (২০)।

এছাড়া, গত ২ জুন, ৫ জুন এবং ৩১ মে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৫ জনকে আটক করে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। যাদের অধিকাংশই বহিরাগত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাফিজুরের মৃত্যুর সঙ্গে ভয়ঙ্কর মাদকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারই অংশ হিসেবে এসব অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গতকাল মধ্যরাতেও আমরা অভিযান চালিয়েছি তবে খবর পেয়ে মাদকাসক্তরা পালিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত পাঁচটি অভিযানে ২০-২৫ জনকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কাউকে যদি এসব কাজে জড়িত পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রক্টর আরও বলেন, আমাদের মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঢাবি ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত করা আমাদের লক্ষ্য। অভিযান চালানোর সময় আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা হামলার শিকার হয়, আমাদের গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। হামলা চালানো একজন মাদকাসক্তকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

মাদকবিরোধী অভিযানে হামলা চালানো মাদকাসক্ত

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশিদ বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যারা মাদকের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট তাদের কোর্টে চালান করা হয়েছে। যারা সরাসরি যুক্ত নয়, তাদের অভিভাবকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

ঈদের পর দিন ১৫ মে জরুরি কাজের কথা বলে ঢাকার রওনা হয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাড়েরা গ্রামের ইমাম মুজিবুর রহমানের ছেলে হাফিজুর রহমান। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। আট দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার লাশ শনাক্ত করে পরিবা। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে শাহবাগ থানার ওসি মামুন অর রশিদ বলেছিলেন, ১৫ মে রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা নিজেই কাটতে থাকেন হাফিজুর। আর বলছিলেন- ‘আমাকে মাফ করে দাও।’

তখন হাফিজুর মারা গেলেও তার পরিচয় শনাক্ত হয়নি। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড) সেবন করেছিলেন এই তরুণ, আর তারপরই বিভ্রম ঘটায় আত্মহত্যা করেন তিনি।

এইচআর/এনএফ