প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গান গেয়ে প্রতিবাদ এবং শিক্ষক পদ পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সংগীত বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। 

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) অপরাজেয় বাংলার সামনে সংগীত বিভাগের আয়োজনে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

সংগীত বিভাগের ২০২৩-২০২৪ সেশনের শিক্ষার্থী ওহি বলেন, আমরা অনেকে এই বিভাগে পড়াশোনা করে শিল্পী হবো না। অনেকেরই ইচ্ছা থাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংগীতের শিক্ষক হ‌ওয়া। কিন্তু সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। সংগীত মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম তৈরি করে। সংগীত হলো প্রতিবাদের ভাষা। জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা দেখেছি সংগীত কিভাবে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে কাজ করেছে। 

তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, অতি দ্রুত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক সহকারী শিক্ষক পদ পুনবর্হাল করতে হবে।

ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য হেমা চাকমা বলেন, বহু জাতি সত্তার দেশ বাংলাদেশ। এখানে কোনো নির্দিষ্ট জাতি নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় গান আমাদের স্পিরিট দিয়েছিল। এই গানগুলোকে কি আমারা অস্বীকার করতে পারবো‌? চব্বিশের আন্দোলনে কী এই সংগীত ভূমিকা রাখেনি? 

তিনি আরও বলেন, গান এমন একটি বিষয় এটি চাইলেই বাদ দিতে পারবো না। গানের মাধ্যমে আমরা দেশকে চাই‌। অন্যদিকে আমাদের মেয়েরা শরীরচর্চার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটা অবস্থান তৈরি করেছে।

থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইসরাফিল বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সংগীত শিক্ষক ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক পদ নিয়ে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত আমাদের সংস্কৃতি, সাহিত্যতে গুরুত্বপূর্ণ আঘাত করেছেন। যারা পলিসি ম্যাকিংয়ে আছেন, যারা উপদেষ্টা পরিষদে আছেন তারা অনেকেই শিক্ষক। তাছাড়া শিক্ষা উপদেষ্টাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রথিতযশা শিক্ষক। কিন্তু তারা থাকা সত্ত্বেও এমন সিদ্ধান্তকে তীব্র নিন্দা জানাই। 

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ একটি স্থির স্বাভাবিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা চায়। আজকে শুধু সাংস্কৃতিক কর্মী না সারা বাংলাদেশের মানুষ সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবার অভ্যুত্থানের মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, হুকুম যেহেতু দিয়েছেন এটি বাতিল করেন। শুরু ধর্ম দিয়ে রাষ্ট্রের বিকাশ সম্ভব নয়। অনতিবিলম্বে এই পদগুলো পুনর্বহাল করতে হবে।

সংগীত শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বলেন, আজকে সংগীত বিভাগ যে দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সেই দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি। সরকারের উন্মাদ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে হবে‌। আগে প্রতিবাদের গাই গাইতাম। এখন গান গাওয়াটাই প্রতিবাদ।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেখছি একদল মানুষ সংগীত ও ধর্মকে সামনাসামনি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন‌। সবার কাছে আহ্বান থাকবে আপনারা গান দিয়েই প্রতিবাদ করুন।

এসএআর/এমএসএ