বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কেউ কেউ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একটা লিগাল কেউয়াস সৃষ্টি করে বিভিন্ন বাহানা দিচ্ছে যাতে যথাসময় নির্বাচন অনুষ্ঠান না হতে পারে অথবা বাধাগ্রস্ত হয় অথবা নির্বাচন না হয়। তাতে করে তারা ক্ষমতা ভোগ করবে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের ঢাবি সাদা দলের আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষার রূপান্তর একটি কৌশলগত রোডম্যাপ’ শীর্ষক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছুদিন গেলে দেখা যাবে গণভোটের বিষয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে এই আন্দোলনটা যমুনা থেকে সরে এসে গ্রাম পর্যায়ে যেয়ে নির্বাচনের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে। গতকালকে শুনলাম যে আপাতত তাদের আন্দোলন আর যমুনায় নেই।

নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা ইতিবাচক। কিন্তু গণভোট এবং সংবিধান সংশোধনের মতো বড় সিদ্ধান্তগুলোতে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে জনগণকে অংশীদার করতে না পারলে কোনো সংস্কারই স্থায়ী হবে না।

জাতীয় সংস্কার কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘ আলোচনার পরও এর অনেক সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। সংস্কার কমিশনের কাজ হওয়া উচিত ছিল রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করা। কিন্তু অনেক জায়গায় স্বার্থান্বেষী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষা প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি জাতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে তার শিক্ষাব্যবস্থা টেকসই, বৈজ্ঞানিক ও প্রয়োজনভিত্তিক হতে হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা খাতকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, যার ফলে দেশ মেধা ও গবেষণায় পিছিয়ে পড়ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নলেজ-বেসড, নিড-বেসড এবং রিসার্চ-বেসড শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বহু বছর ধরে তিনধাপের শিক্ষা-সংস্কারের কথা বলে আসছি— নিড-বেসড এডুকেশন, নলেজ-বেসড এডুকেশন এবং রিসার্চ-বেসড এডুকেশন। দেশের প্রয়োজন, ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের সক্ষমতার ভিত্তিতে এ তিনটি স্তম্ভ তৈরি করতে হবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষা খাত ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র সবচেয়ে ঘৃণ্য অপরাধের চেয়েও ভয়ংকর, কারণ এর প্রভাব এক প্রজন্ম নয়, বহু প্রজন্ম ভোগ করে। একজন শিক্ষক বা বুদ্ধিজীবীকে ভুল তথ্য দিলে তিনি তা হাজারো ছাত্রের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। এতে গবেষণার মান, জ্ঞানচর্চা এবং দেশের সৃজনশীল সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর একটি ভারতীয় বুদ্ধিজীবী চিন্তাধারা এ দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, এর ফলে এমন এক শ্রেণি তৈরি করা হয়, যারা রক্তে বাংলাদেশি হলেও চিন্তাধারায় ভারতীয় শক্তির অনুসারী। এর ফলে দেশীয় চেতনা, গবেষণা, প্রযুক্তি এবং ন্যাচারাল সায়েন্সের চর্চা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য নিয়েও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো চাকরি খোঁজার কেন্দ্র নয়। বিশ্ববিদ্যালয় হলো চিন্তার জায়গা, গবেষণার জায়গা, জ্ঞান উৎপাদনের জায়গা। অথচ শিক্ষার উদ্দেশ্য ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। ফলে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কর্মজীবী তৈরি করছে, চিন্তাশীল মানুষ তৈরি করতে পারছে না।

তিনি মানসিক সংস্কারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, আইন, নীতি বা কাঠামো বদলালেও মানুষের চেতনায় পরিবর্তন না আনতে পারলে পরিবর্তন টেকসই হয় না। আমরা আগে মানসিক সংস্কার করব, তারপর প্রশাসনিক সংস্কার। মানুষের মননে মুক্ত চিন্তা, গবেষণার আগ্রহ এবং নিজের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা তৈরি করতে হবে।

বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজন স্পষ্ট জাতীয় ক্যানভাস। সব নীতি, পরিকল্পনা ও গবেষণা একটি জাতীয় কাঠামোর অধীনে সমন্বিতভাবে সম্পন্ন করতে হবে। তাহলেই দেশ এগোবে।

এসএআর/এমএন