রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজকর্ম বিভাগের ড্রপ আউট হওয়া এবং ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত এক ছাত্রলীগ নেতাকে অবৈধভাবে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, কারণ শাস্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া সত্ত্বেও ওই নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হচ্ছে।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম মুজাহিদ আল হাসান (সাজু)। তিনি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। গণঅভ্যুত্থানের পর ২২ ডিসেম্বর সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে। তবে সেই শাস্তির এক বছরও না পেরোতেই তাকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া তার বৈধভাবে রি-অ্যাডমিশন পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। কিন্তু তিনি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী অবৈধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, একজন শাস্তিপ্রাপ্ত ও নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তার শাস্তির মেয়াদও শেষ হয়নি। বিভাগ কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিল, তা আমাদের বুঝে আসে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অ্যাকাডেমিক সেকশন) এ এইচ এম আসলাম হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী চার বছরের কোর্স ছয় বছরের মধ্যে শেষ করতে হয়। অর্থাৎ কেউ দুইবার রি-অ্যাডমিশন নিতে পারে, এর বেশি সুযোগ নেই।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস বলেন, বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে মুজাহিদ আল হাসানকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মিটিং চলাকালে গণঅভ্যুত্থান-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, শুরুতে যারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, তাদের কাছ থেকে মৌখিক ও লিখিত মুচলেকা নেওয়া হয়েছে, যেখানে তারা মুজাহিদকে ভুলক্রমে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছেন।

তিনি আরও সন্দেহ প্রকাশ করেন যে সিন্ডিকেটও হয়তো ভুলক্রমে তাকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।

ড্রপ আউট হয়ে কেউ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে কি না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিশেষ বিবেচনায় ড্রপ আউটদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং পূর্বেও এমন নজির আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মো. নিজাম উদ্দীন বলেন, সিন্ডিকেট তাকে দুই বছরের শাস্তি দিয়েছিল। এরপর এ বিষয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি এবং কারও শাস্তি শিথিলও করা হয়নি। তাই তার শাস্তির আদেশ বহাল রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. মাঈন উদ্দীন বলেন, সিন্ডিকেট থেকে শাস্তিপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষার্থী শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ক্লাস বা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে না। আর ড্রপ আউট কারও ক্ষেত্রে তো সুযোগ থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যদি কাউকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়ে থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জুবায়ের জিসান/এআরবি