জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নতুন ছয়টি হল নির্মাণ প্রকল্পে পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবিতে প্রকল্প কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদের প্রতিনিধিরা। সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে।

জাকসুর স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক হুসনি মোবারক এবং কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আলী চিশতীর উপস্থিতিতেই প্রকল্প কার্যালয়ে তালা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সন্ধ্যা ৬টায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। প্রকল্পগুলোর পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তালা না খোলার ঘোষণা দেন জাকসু ও হল সংসদের প্রতিনিধিরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, ২১ নম্বর ছাত্র হল (সাবেক শেখ রাসেল হল), তাজউদ্দীন আহমদ হল, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল, বীর প্রতীক তারামন বিবি হল, ফজিলতুন্নেসা হল ও রোকেয়া হলের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সব নথিপত্র প্রকাশ করতে হবে। তাদের দাবি করা নথির মধ্যে রয়েছে- সয়েল টেস্ট রিপোর্ট, স্ট্রাকচারাল ডিজাইন, অথোরিটি অ্যাপ্রুভাল শিট এবং আর্থিক হিসাব।

জাকসুর কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আলী চিশতী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন ছয়টি হলের নির্মাণে দুর্নীতির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের সন্দেহ অমূলক নয়। মেয়েদের তিনটি হলে ১৪ কোটি টাকার দুর্নীতি, ২০১৯ সালের আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা, প্রকল্পে চাঁদাবাজির অভিযোগে তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতাদের বহিষ্কার- সবই স্পষ্ট দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ফাটল ধরা, ছাদ দিয়ে পানি পড়া, কর্মচারী সংকট, পর্যাপ্ত লিফট না থাকা এবং মেয়েদের হলে অর্ধেক ফ্যান অকেজো থাকা এসব অনিয়ম সেই সন্দেহকে আরও জোরালো করে।

তিনি আরও বলেন, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের অনেক আগেই এসব রিপোর্ট যাচাই করে প্রকাশ করা উচিত ছিল। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির কারণে এখনো রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আজ আমরা প্রকল্প অফিস তালাবদ্ধ করেছি। রিপোর্ট প্রকাশ না করা পর্যন্ত তালা খুলবে না এটাই শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত অবস্থান।

জাকসুর স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক হোসনে মোবারক বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ছয়টি হল নির্মাণে অনিয়ম ও গুণগত ঘাটতির আশঙ্কা আমাদের মধ্যে রয়েছে। সামান্য ভূমিকম্পেই বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেওয়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। শুধু আনুষ্ঠানিক পরিদর্শন দিয়ে এ সমস্যা ঢেকে রাখা যাবে না। আমরা চাই স্বতন্ত্র প্রকৌশল মূল্যায়ন এবং প্রকল্পের সব নথির উন্মুক্ত প্রকাশ। জনগণের করের টাকায় নির্মিত ভবনে কোনো অস্পষ্টতা বা অবহেলা আমরা মেনে নেব না।

এ বিষয়ে জানতে উচ্চতর উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (পিডি) নাসিরুদ্দিন বলেন, তারা হল নির্মাণের বিভিন্ন নথি চেয়েছে। আমি তাদের বলেছি, বিষয়টি আমি প্রশাসনকে জানাব। কোনো বিষয়ে তো আমি একা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, সকালে আমাদের তিনজন কর্মচারী অফিসে এসেছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের বের করে দিয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। আমি তখন ইউজিসির একটি ওয়ার্কশপে ছিলাম। আমাকে ফোন করে বলা হয়, এক ঘণ্টার মধ্যে না এলে তারা আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে। তাই ওয়ার্কশপ ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে।

এআরবি