দেশে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর ১৮ মার্চ থেকে অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও (ঢাবি)। সেশনজট রোধে অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে গেলেও এতদিন পরীক্ষা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কয়েকবার পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

গত ১ জুন একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় হল না খোলা শর্তে সশরীরে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১৫ জুন থেকে স্থগিত পরীক্ষা এবং ১ জুলাই থেকে সব বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়। তবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১ জুলাই থেকে পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব পরীক্ষা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। 

হল না খোলা শর্তে শিক্ষার্থীদের সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগ সশরীরে পরীক্ষা নেয়। তবে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিভিন্ন জেলায় লকডাউন এবং করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশে আগামী বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এতে বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এ পরিস্থিতিতে সশরীরে পরীক্ষা বাতিল করে জুলাই থেকে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনলাইনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, সে জন্য আমরা মনে করি যে অফলাইনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া আমরা গত ১ জুন একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে পরিস্থিতির অবনতি হলে পরীক্ষা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালা সরবরাহ করা হয়েছে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটা টিউটোরিয়ালও তৈরির কাজ চলছে, অনতিবিলম্বে সেটা আমরা শেষ করব। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা চাচ্ছি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু অবস্থা খুবই বেগতিক, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই। সংক্রমণ বিবেচনায়, মৃত্যুহার যেভাবে বেড়েছে তাতে মনে হয় না সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে। আমাদের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সব বিভাগে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।  

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরীক্ষার বিষয়ে বিভাগগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা সিদ্ধান্ত নেবে অনলাইন কিংবা সশরীরে। তবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সশরীরে পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিভাগগুলো অনলাইনে পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সশরীরেও পরীক্ষা নিতে পারবে।

এদিকে অনলাইনে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষা নেওয়া হবে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা এরই মধ্যে ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালের নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করে, তা সংশ্লিষ্ট অনুষদ এবং বিভাগগুলোয় পাঠানো হয়েছে।

যা আছে নীতিমালায় 

পরীক্ষা গ্রহণের জন্য প্রতি সেমিস্টার বা বর্ষের শিক্ষার্থীদের গুগল ক্লাসরুম ব্যবহার করতে হবে। প্রতি সেমিস্টার বা বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ক্লাসরুম অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কমিটি এই ক্লাসরুম খুলবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ইনস্টিটিউশনাল ই-মেইল আইডি ব্যবহার করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে তিন দিন আগে গুগল ক্লাসরুম অ্যাকাউন্টে যোগ দেবে। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য আলাদা অ্যাসাইনমেন্ট খোলা হবে। অ্যাসাইনমেন্টে নির্ধারিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংযুক্ত থাকবে যা পরীক্ষার পাঁচ মিনিট আগে গুগল ক্লাসরুমে প্রকাশ করা হবে। পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।

পরীক্ষার সময় ও নম্বর প্রচলিত সময় ও নম্বরের অর্ধেক হবে। তবে নম্বর ফল বিন্যাসের সময় দ্বিগুণ করে পূর্ণ নম্বরে রূপান্তরিত করতে হবে।

দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা প্রতি ঘণ্টার জন্য অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় বেশি পাবে। তারা নিজ দায়িত্বে তার চেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন একজন শ্রুতি লেখক নির্বাচন করতে পারবে।

পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পূর্বে জুমে প্রবেশ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নামের পরিবর্তে শুধু পরীক্ষার রোল নম্বর ব্যবহার করতে হবে।

পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থীদের ভিডিও সচল রাখতে হবে। পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগেই বিভাগ থেকে প্রশ্নপত্রের ধরন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে। এছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেশন করতে হবে। পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র স্ক্যান করে বা ছবি তুলে একটি সিঙ্গেল পিডিএফ ফাইলে গুগল ক্লাসরুমের অ্যাসাইনমেন্টে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে জমা দিতে হবে।

এইচআর/এসকেডি