বাঙালি জাতির গর্ব ও অহংকারের প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পা দিয়েছে শতবর্ষে। প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনের আনন্দ ভাগাভাগি করছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। বর্তমান শিক্ষার্থী তো বটেই, সাবেক শিক্ষার্থীদেরও ভালোবাসার কমতি নেই প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি। তারাও প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি প্রকাশ করছেন নিজের অব্যক্ত অনুভূতির কথা। তাদের সেইসব অনুভূতির কথা লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জামিন আহমদ।

মো. জুয়েল রানা

শিক্ষার্থীদের স্বার্থ নিশ্চিত করা জরুরি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ বছরে পা দেওয়ায় অনেক গর্ব ও আনন্দ অনুভব করছি। বলা বাহুল্য বাঙালি জাতির সব অর্জনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য। একবিংশ শতাব্দীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী শিক্ষা, দক্ষ মানবসম্পদ, টেকসই উন্নয়ন এবং নতুন নতুন গবেষণার ক্ষেত্র তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। পাশাপাশি ছাত্র- ছাত্রীদের থাকা-খাওয়া ও পরিবহন সুবিধা যেন মানসম্মত হয় সে আশাও রাখছি। একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে শতবর্ষের এ মাহেন্দ্রক্ষণে প্রত্যাশা করছি, আমার প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব শিক্ষা মানচিত্রে এক অনন্য উচ্চতায় উপনীত হবে এবং গৌরব, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণ করে বহুদূর এগিয়ে যাবে।

মো. জুয়েল রানা, সহকারী পরিচালক, ১ আনসার ব্যাটালিয়ন, ঠাকুরগাঁও। প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

মো. ইএইচ রাহুল

শিক্ষার গুণগত মান ও গবেষণা বৃদ্ধি অপরিহার্য 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি আবেগের নাম। যে আবেগ সৃষ্টি হয়েছে একটি জাতির ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে। শতবর্ষ উদযাপনে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে, যেখানে অনেক চড়াই উতরাই পার করে আসতে হয়েছে। শতবর্ষ উদযাপনের এই মহা সন্ধিক্ষণে আমার প্রাণপ্রিয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করছি। আশা করছি, শতাব্দী প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টি আগামী দিনে গুণগত শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি গবেষণাতেও চমক বয়ে আনবে।

মো. ইএইচ রাহুল, সহকারী পরিচালক (অর্থ), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রাক্তন শিক্ষার্থী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।   

মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান

আদর্শ বাঙালি গড়ার প্রতিষ্ঠান

একজন শিক্ষার্থীকে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে ঢাবির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ঢাবিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী আসেন মফস্বল এলাকা থেকে। বলতে দ্বিধা নেই আমিও সেই দলের একজন সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধা ও মনন বিকাশে শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার পাশাপাশি নানা ধরনের সামাজিক  সংগঠন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, স্কাউট, বিএনসিসি, ট্যুরিস্ট সোসাইটি, সাংবাদিক সমিতি, নাট্য সংসদ, কুইজ সোসাইটি, জয়ধ্বনি, আইটি সোসাইটি ও পরিবেশ সমিতির মতো সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা আমাদের পরবর্তী কর্ম জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘজীবী হোক।

মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান, ব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বালিয়া শাখা, ঢাকা। প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আলো আরজুমান বানু

ঢাবি বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে জড়িত

বঙ্গভঙ্গ রদের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের প্রাদেশিক মর্যাদা রহিত করায় এ অঞ্চলের মানুষের মনে যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমন এবং কৃষিপ্রধান পূর্ববঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকার ‘রাজকীয়’ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৯২১ সালে ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল। শতবছরের এ পথ চলায়  কেবল একাডেমিক ও গবেষণা নয় বরং বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় নির্মাণ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়সহ বাংলাদেশের প্রতিটি গৌরবময় অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার গুণগতমান এবং এর সামগ্রিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে এর অবসান হবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহ্য, গৌরব ও সুনাম সমুন্নত রেখে আগামীর পথে এগিয়ে যাবে; জন্ম শতবার্ষিকীতে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

আলো আরজুমান বানু, সহকারী অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।  

শফিকুল ইসলাম শাওন

বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক মান বাড়াতে হবে 

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশের রোমাঞ্চকর ও চ্যালেঞ্জিং সময়ে প্রাণের ক্যাম্পাসে ছাত্র হয়ে আসার সুযোগটি জীবনের ভাবানুবেগ বাড়িয়ে দিয়েছিল কয়েকগুণ। বহু সংগ্রাম, সাফল্য ও বাংলাদেশ নামক প্রত্যয়টির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠার পথ পরিক্রমায় ক্যাম্পাস জীবনে ঘটে যাওয়া নানা গল্প ও স্মৃতি আজও নিজেকে সম্মোহিত করে। সৃজনশীলতা ও গবেষণা সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে আগত নানা বৈশ্বিক ও দেশীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং মানুষ গড়ার কারিগর হওয়ার প্রয়াস সমুন্নত রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশ, সমাজ ও জাতির আলোকবর্তিকা ও অগ্রপথিক হয়ে উঠুক। শতবর্ষ উদযাপনের এ আনন্দঘন মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য কামনা করছি।

শফিকুল ইসলাম শাওন, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এসকেডি