বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে ফেরাতে করোনাভাইরাসের টিকা দিতে দেশের বিভিন্ন সরকারি, জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করা হলেও সেখানে স্থান পায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিবেচনায় টিকা পেতে সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের তথ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানোর কথা থাকলেও ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিষয়টি নাকচ করে দেন। তিনি বলেছেন, ‘টিকা প্রাপ্তির বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্ত এবং স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যে যে প্রতিষ্ঠানের কাছে চাইবে তারাই তালিকা দেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা নেবে। সরকারি কলেজ হওয়ায় ওগুলোর (সাত কলেজ) বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। কলেজগুলোর কর্তৃপক্ষকে বললে তারা তালিকা দেবে।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কোনোভাবেই সরাসরি কলেজ থেকে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে না জানিয়ে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘ইউজিসির আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, দেশের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে সমন্বয় করবে। কলেজ পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করবে না। এক্ষেত্রে অধিভুক্ত কলেজগুলোর বিষয়াদি স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখবে।’

এমন অবস্থায় ইউজিসির সরবরাহকৃত তালিকার ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে টিকাগ্রহণ সম্পন্ন করলেও এখনও আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করছে সাত কলেজ প্রশাসন।

তবে তথ্য সংগ্রহ করলেও শিক্ষার্থীরা কীভাবে টিকা পাবেন সেই বিষয়ে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দফতর বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নিশ্চয়তার কথা জানাতে পারেনি সাত কলেজ প্রশাসন। কেননা, এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট কেউই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের তালিকা চায়নি। নিজ উদ্যোগেই এই তালিকা প্রস্তুত করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। 

কিন্তু ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের সব নাগরিককে এখন থেকে টিকা প্রদানের বিষয়টি ইতোমধ্যেই প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে এবং অধিকাংশ নাগরিককে টিকার আওতায় আনতে এখন থেকে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের সকল নাগরিককেই টিকা প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যেই সরকারের আইসিটি বিভাগের আওতাধীন জাতীয় সুরক্ষা অ্যাপে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিক যেন রেজিস্ট্রেশন করতে পারে সে ব্যাপারে একটি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।’

এমন টানাপোড়নে সাত কলেজের অভিভাবক কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাকি শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাকি অন্য কেউ তা নিয়ে সংশয়ের কথা জানালেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও।

ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, সাত কলেজে প্রায় ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়ার কথা ছিল। যেখানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা টিকার রেজিস্ট্রেশন করে ইতোমধ্যেই টিকা গ্রহণ করছে, সেখানে আমাদের প্রশাসন এখন পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দায়িত্ব নিবে না, শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিবে না, ইউজিসি নিবে না- তাহলে আমাদের টিকা নিশ্চিতের দায়িত্ব কার?

কলেজ প্রশাসনের মাধ্যমে নয় বরং সরকারের গণটিকা কার্যক্রমই এখন ভরসা, এমনটিই বললেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মামুন সোহাগ।

ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মীম বলেন, এখন পর্যন্ত কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের টিকার বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। এখন সরকারিভাবেই ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকেই টিকা দেওয়া হবে। তবে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পেলেও সাত কলেজ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা কেন সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলাম সেটি স্পষ্ট নয়।

তবে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনতে সাত কলেজ প্রশাসনের চেষ্টার কোনো কমতি নেই বলে জানান ঢাকা কলেজের শিক্ষক পরিষদ ও সেভেন কলেজ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই ১৮ বছর বয়সের উপরের সবাইকে টিকা প্রদান করার সিদ্ধান্তের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এমনিতেই টিকার আওতায় পড়বে। এরপরও যারা বয়সের সীমাবদ্ধতা বা কোনো কারণে টিকা নিতে পারবে না তাদের বিষয়টি কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেখা হবে।

এ বিষয়ে সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিমউল্লাহ খোন্দকার বলেন, আমাদের আবাসিক শিক্ষার্থীদের তথ্য ইতোমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। যাচাই-বাছাই শেষে এগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রেরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা টিকা পেলেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কেন টিকা পেল না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি সরকারের যে অগ্রাধিকার তালিকা ছিল সেটিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের নাম ছিল না। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি টিকা নিশ্চিত করতে।

আরএইচটি/এইচকে