অনলাইনে মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি ভাষা বিভাগ। গত ২৬ জুলাই থেকে আজ ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হওয়া তিনটি কোর্সের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছিল শতভাগ। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি ভাষা বিভাগ সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

মহামারি করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও অনলাইনে চলছে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম। তবে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম চললেও পরীক্ষা নিয়ে বেগ পোহাতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।

শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এবং শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ সশরীরে ফাইনাল পরীক্ষা নিলেও কয়েকবার পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েও করোনা সংক্রমণের কারণে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা নিতে পারেনি বেশিরভাগ বিভাগ।

দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে, অনলাইনে নিতে বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইসাথে অনলাইনে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষা নেওয়া হবে এ–সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা এবং ভিডিও টিউটোরিয়াল প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। 

২৬ জুলাই থেকে ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হওয়া তিনটি কোর্সের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছিল শতভাগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করে অনলাইনে মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি ভাষা বিভাগ। আর তাতে সফলও হয় বিভাগটি। গত ২৬ জুলাই থেকে আজ ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হওয়া তিনটি কোর্সের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছিল শতভাগ।

দীর্ঘদিন পর হলেও পরীক্ষা দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্ৰকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, পরীক্ষাটার জন্য আমরা দীর্ঘ এক বছর পিছিয়ে পড়েছি। অনলাইন পরীক্ষা নিয়ে সংশয় থাকলেও বিভাগের দায়িত্বশীলতায় আমরা অনলাইনে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পেরেছি।

ইংরেজি ভাষা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নানা ধরনের সংশয়-শঙ্কা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষাটা আমরা দিতে পারলাম, এটা সত্যিই ভালো লাগার বিষয়। এই পর্যায়ে এসে সময় নষ্ট কাম্য না, সেক্ষেত্রে আমাদের বিভাগের দূরদর্শী সিদ্ধান্তে আমরা অনেকটা হতাশা থেকে মুক্ত হতে পারছি। ছোটখাটো নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত সমস্যা ছাড়া, বড় কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানান মামুন।

আরেক শিক্ষার্থী নুশরাত আরা বলেন, অনলাইন পরীক্ষার বিষয়ে যে ভয়টা কাজ করছিল সেটা পরীক্ষা শুরুর আগ পর্যন্তই ছিল। পরীক্ষার দেওয়ার পর বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা খুব সহজ। আমরা বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গ্রামাঞ্চলে। তবে আমাদের তেমন বেগ পেতে হয়নি। 

জানতে চাইলে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও কোর্স কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দু-একটা পরীক্ষার জন্য দেড় বছরের বেশি সময় ঝুলে থাকায় শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। তাছাড়া যেহেতু টিকাদান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না, সেহেতু আপাতত অনলাইনের বিকল্প নেই। সবকিছু বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে, তাদের সম্মতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা মেনে ইংরেজি ভাষা বিভাগের মাস্টার্সের পরীক্ষা অনলাইনে নিয়েছি। আর তাতে ব্যাচের ৩২ জন পরীক্ষার্থী সফলভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, এখন প্রত্যেক ব্যাচের দুটি করে সেমিস্টার আটকে আছে। আর একটু অপেক্ষা করলে তিনটা হয়ে যাবে। তখন বিষয়টা কঠিন হয়ে যাবে। সেটি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে অনলাইনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় কোনো জটিলতা নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থী কো-অপারেটিভ হলে সহজে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। আমরা অনলাইনে সব ব্যাচের পরীক্ষা নিয়ে নেব। 

জুম এবং গুগল ক্লাসরুমের মাধ্যমে ক্যামেরা অন করেই পরীক্ষা হয়েছে 

পরীক্ষা চলাকালীন কোনো সমস্যা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জুম এবং গুগল ক্লাসরুমের মাধ্যমে ক্যামেরা অন করেই পরীক্ষা নিয়েছি। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করা সত্ত্বেও তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। কয়েকজন শিক্ষার্থী ডিসকানেক্ট হলেও তাদের আবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য সব ধরনের অপশন রেখেছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিভাগ/ইনস্টিটিউটগুলোকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যদি চায় বিভাগুলো পরীক্ষা নিতে পারবে। ইতোমধ্যে আমরা একটি নীতিমালাও করে দিয়েছি। এই নীতিমালা অনুযায়ী বিভাগগুলো পরীক্ষাও নিচ্ছে। আশা করছি পর্যায়ক্রমে সকল বিভাগ অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষা নেবে এবং আমাদের শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারবে।

কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সম্মতিতে বিভাগগুলো পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করবে। এটা পুরোপুরি বিভাগ/ইনস্টিটিউটের এখতিয়ার।

এইচআর/এইচকে