করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলো। হল খোলা অবস্থায় শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন ক্যান্টিন মালিক-কর্মচারীরা। হল বন্ধ থাকায় আয়ের পথ বন্ধ তাদের। ফলে চরম বিপন্ন অবস্থায় এসব মানুষের জীবন। একই অবস্থা ক্যাম্পাসের অন্য দোকান মালিক-কর্মচারীদেরও।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় শতাধিক ক্যান্টিন, দোকান ও ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। এসব দোকানে অন্তত এক হাজার লোক কাজ করতেন। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করায় তাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। দফায় দফায় বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোয় এবং আয় না থাকায় পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশকিছু খাবারের পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে বকেয়া টাকাও রয়ে যায়। এছাড়া দীর্ঘদিন এ পেশার সঙ্গে জড়িত থাকায় করোনায় অন্য কোনো কাজ খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়ে তাদের জন্য। একই সঙ্গে ক্যাম্পাস আজ খুলবে, কাল খুলবে ভেবে অপেক্ষা করে গেছেন তারা। সবমিলিয়ে কঠিন একটা সময় পার করতে হচ্ছে তাদের। এ কঠিন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সহযোগিতাও চেয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে প্রহর গুনছেন কবে খুলবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, সচল হবে তাদের আয়ের পথ।

বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ক্যান্টিনের মালিক মনির হোসেন বলেন, ক্যাম্পাস খোলা পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ছিল। এরপর আস্তে আস্তে সবকিছু কেমন জানি অন্ধকার হয়ে আসে। বেশ কয়েক মাস হল খোলার আশায় বসে ছিলাম। এরপর পরিবারের এক বেলা খাবার জোগাড় করতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এটা সেটা করে এখন দিন এনে দিন খাচ্ছি। জানি না এ পরিস্থিতিতে আর কতদিন থাকতে হবে, কবে সবকিছু আগের মতো ফিরে পাব।

সর্বস্ব হারিয়ে ‘পাঠাও’ চালক হয়েছেন কবি জসিম উদ্দীন হলের ক্যান্টিন মালিক মুবারক হোসেন। তিনি বলেন, মা, বোন, ভাইসহ বড় একটি পরিবার আমার ঘাড়ে। ছোট বেলা থেকে ক্যান্টিনের সঙ্গে আছি। অন্য কোনো কাজও জানা নেই। তাই পেটের দায়ে এখন ‘পাঠাও’ চালানোর কাজে নেমেছি। দক্ষ চালক না হওয়ায় এ পেশায়ও উপার্জন চাহিদা মাফিক হচ্ছে না।

খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে উল্লেখ করে দোকান মালিক হাবিব উল্লাহ বলেন, করোনার কারণে টানা আট মাস বেকার বাড়িতে বসে ছিলাম। যা পুঁজি ছিল সব শেষ। উপায় না দেখে ঢাকা এসে এখন ভ্যানে করে এটা-সেটা বিক্রি করছি। তবে তা দিয়ে নিজের ও পরিবারের ভরণপোষণ হচ্ছে না। ক্যাম্পাস খোলার দিকেই তাকিয়ে আছি।

ক্যাম্পাস খোলার দাবি জানিয়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের কর্মচারী রাসেল বলেন, এভাবে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না। ক্যাম্পাস না খুললে না খেয়ে মরতে হবে।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক ভিপি কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হল বন্ধ থাকায় তাদের যে দুর্দশা সেটা বুঝতে পেরে আমরা ছাত্রলীগের উদ্যোগে কিছু খাদ্যসামগ্রী তাদের উপহার দিই। আমি ব্যক্তিগতভাবেও কিছু সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। তবে তাদের সংকট কাটানোর মতো আমরা তেমন কিছুই করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অনেকের স্বার্থ জড়িত, দ্রুত হল-ক্যাম্পাস খুলে দিলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।

এ বিষয়ে স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কে. এম. সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা স্বাভাবিকভাবেই বিপাকে পড়েছে। আমরা ইতোমধ্যে দোকান ও ক্যান্টিনের ভাড়া মওকুফ করেছি। আমরা তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। ক্যাম্পাস খুললে এমন পরিস্থিতি আর থাকবে না।

সার্বিক বিষয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাদের কষ্ট আমরা অনুভব করতে পারছি। কিন্তু এ মহামারির বাস্তবতাকেও আমাদের মেনে নিতে হবে। এমন পরিস্থিতি আসবে আমরাও কল্পনা করিনি। করোনা সংক্রমণ কমছে, হল খোলারও একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করি সবকিছু আগের মতোই হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওইভাবে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়নি। তবে হল প্রশাসন এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই তাদের সহযোগিতা করেছে বলে জানতে পেরেছি।

এইচআর/এসএসএইচ