বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর কর প্রত্যাহার করে, শিক্ষাব্যবস্থায় করোনাকালীন অচলায়তন ভেঙে বাণিজ্যমুক্ত গণমুখী বৈজ্ঞানিক শিক্ষাপদ্ধতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বাম ধারার ছাত্র সংগঠনগুলো।

শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট আয়োজিত পৃথক পৃথক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।

এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আলোচনা সভা করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। সভায় সেশনজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, সকল শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও হেল্থকার্ড প্রদান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর কর প্রত্যাহার, টিকার আওতায় এনে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান তারা।

আলোচনা সভায় ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ ৬২-র শিক্ষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ৬২-তে ছাত্রদের রক্তের সাথে শ্রমিকের রক্ত মিশে শিক্ষা আন্দোলন সফল হয়েছিল। বর্তমান সময়েও কোনো আন্দোলন শুধু ছাত্রদের রক্ত দিয়ে সফল হবে না, শ্রমিক-কৃষকদের রক্তও ছাত্রদের রক্তের সাথে মিশতে হবে। তবে সেরকম আন্দোলন করতে হলে ছাত্রদের আগে শুরুটা করতে হবে।

তিনি বলেন, আজ ৬২-র শিক্ষা আন্দোলনের এত বছর পর দেশে প্রাইভেট মেডিকেল হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, আর সেখানকার বেতন আর সরকারি বেতনের মধ্যে পার্থক্য আছে। সরকারি স্কুলের টিচার করোনাকালে বেতন পেয়েছে কিন্তু প্রাইভেটের টিচাররা বেতন পায়নি। প্রাইভেট স্কুলের ছেলেরা পড়তেও পারেনি। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় সরকার আপনাকে তো পড়াতে পারছে না, উল্টো ভ্যাট আদায় করছে। সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিল, বিএ ক্লাস পর্যন্ত আমরা লেখাপড়া অবৈতনিক হবে। কিন্তু এখন বিএ ক্লাস তো দূরের কথা স্কুলও আপনার হাতের টাকার ওপর নির্ভর করে। সুতরাং, এখানে একটা বিরাট আন্দোলন আপনাদের করতে হবে। একইসাথে আপনাদের একটা দাবি তুলতে হবে যে, শিক্ষায় জাতীয় বাজেট জিডিপির ৪ শতাংশ দিতে হবে। 

এদিকে, শিক্ষার বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ প্রতিহত, শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল বেতন-ফি মওকুফ করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্র সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ)। সভার সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি আল কাদেরী জয় এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স।

সভায় তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর জাতীয় রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, আমরা আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন দেখেছি। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আমরা এদেশকে স্বাধীন করেছি। ৬২ সালে শিক্ষার অধিকার নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি। কিন্তু আমরা এখনো শিক্ষার অধিকার ফিরে পাইনি। শিক্ষাকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। পৃথিবীর বহুদেশে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি লোক করোনাক্রান্ত হওয়ার পরেও বাংলাদেশে যতদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ততদিন বন্ধ আর কোথাও ছিল না। পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্র বিভিন্ন সময় শিক্ষা চালু রাখার চেষ্টা করেছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার চেষ্টা করেছে। 

পৃথিবীর কোথাও কোনো দেশ নেই যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পুরো শিক্ষাব্যবস্থা বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ ও বেসরকারিকরণ বন্ধ করার দাবি করেন তিনি। সকল স্তরের জনগণের  শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এগুলো বন্ধ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্বৈরশাসক আইয়ুব খান গঠিত শিক্ষা কমিশনের শিক্ষানীতি তথা শিক্ষা সংকোচন নীতির প্রতিবাদে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। ছাত্রদের ডাকা হরতালে পুলিশের দফায় দফায় লাঠিচার্জ, কাঁদান গ্যাস নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে শহীদ হন গোলাম মোস্তফা, বাবুল ও ওয়াজিউল্লাহ। সেই থেকে ছাত্রসমাজ দিনটিকে সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের মহান শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

এইচআর/এইচকে