দীর্ঘ ১ বছর ৬ মাস ৮ দিন অর্থাৎ ৫৫৭ দিন পর ছাত্রাবাসের অন্ধকার কক্ষে দেখা মিলল আলোর। করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণ।

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকেই বরাদ্দকৃত ছাত্রাবাসের কক্ষে আসতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার, উপাধ্যক্ষ ও ছাত্রাবাস কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ.টি.এম মইনুল হোসেন ও উত্তর ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল করিম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিক অবস্থায় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং করোনার নেগেটিভ সনদ যাচাই শেষে শুধুমাত্র দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরই ছাত্রাবাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আগামী ৮ অক্টোবর (শুক্রবার) থেকে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্যও ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে।

এ কারণে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া হয়েছে বেশকিছু নির্দেশনাও। সেগুলো হলো-

১. ২ অক্টোবর (শনিবার) হলে সিটের জন্য আবেদন করা ছাত্রদের সিট বরাদ্দের ফলাফল ও ছাত্রাবাসে অবস্থানের নিয়মাবলী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।

২. ৩-৬ অক্টোবরের মধ্যে সিট বরাদ্দকৃত ছাত্রদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ সার্টিফিকেট স্ব স্ব ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কের কাছে জমা দিতে হবে এবং সিটরেন্ট নগদ, বিকাশ অথবা রকেটের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

৩. ৭ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সিটরেন্ট ও সার্টিফিকেট জমাদানকারী ছাত্রদের ছাত্রাবাসের নির্ধারিত কক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

৪. এবং ৮ অক্টোবর (শুক্রবার) বিকেল ৩টা থেকে সিট বরাদ্দকৃত ছাত্ররা স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্ব স্ব কক্ষে অবস্থান করতে পারবে।

অপরদিকে দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসের ছাত্রাবাসে ফিরতে পেরে আনন্দিত শিক্ষার্থীরাও। সরেজমিনে ঢাকা কলেজের উত্তর ছাত্রাবাস এবং শহীদ শেখ কামাল ছাত্রাবাস ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন কক্ষে আগত শিক্ষার্থীরা রুম গোছানোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

উত্তর ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী ফাহিম মুনতাসির বলেন, দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় পর ছাত্রাবাসে ফিরতে পেরেছি এটি সবচেয়ে আনন্দের। আবারও বন্ধুদের সঙ্গে একত্রে থাকতে পারব ভাবতেই খুব আনন্দ লাগছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো বাইরে থেকে আসা যাওয়ার কষ্ট লাঘব হলো।

শহীদ শেখ কামাল ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ বলেন, ক্যাম্পাসে থাকার মজাই অন্যরকম। তবে অবশ্যই আমদের স্বাস্থ্যবিধি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে অবস্থান করতে হবে। আজ প্রথম দিন হওয়ায় একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তবে দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে উঠে যাবে, তখন আরও ভালো লাগবে।

ছাত্রাবাসে অবস্থানের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা কড়াভাবে পালন করা হবে বলে জানান ঢাকা কলেজের উত্তর ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক ওবায়দুল করিম। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করেছি। তাই শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে ছাত্রাবাস খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে কোনোভাবেই যেন স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ২০২০ সালের ২১ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

আরএইচটি/এসএসএইচ