রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৪ ছাত্রের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল এ তথ্য জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে কাঁচি হাতে নিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। ঘটনার আগে পরীক্ষার হলের সামনে তিনি একটি কাঁচি হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। 

এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে শিক্ষক পদ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত না করা পর্যন্ত এই অনশন চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।

অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা একের পর এক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এখন পর্যন্ত মোট পাঁচ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনজনের মধ্যে দুইজন শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে ফিরেছেন। আজ দুপুরে এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান লায়লা ফেরদৌস হিমেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির হাতে একাধিক প্রমাণ এসেছে। আমরা দ্রুত সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করছি। চুল কাটার অভিযোগ ছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের আরও কিছু অভিযোগ আছে বলেও জানান তিনি। 

জানা গেছে, সম্প্রতি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ক্লাস চলাকালে চুল বড় রাখায় ছাত্রদের বকাঝকা করেন। গত শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পরীক্ষার হলের দরজার সামনে তিনি কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কক্ষে ঢোকার সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের চুল মুঠোর মধ্যে ধরা গেছে, তাদের মাথার সামনের কিছু চুল তিনি জোর করে কেটে দেন।

সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওই বিভাগের বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে পরীক্ষা শুরুর আগে লাঞ্ছিত শিক্ষার্থী ও তাদের সহপাঠীরা এ ঘটনার প্রতিবাদে পরীক্ষা বর্জন করেন। তারা বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের জন্য বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস-১ এর ফটকে জমায়েত হন। এ সময় একটি পক্ষ তাদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ও চাপ দিয়ে সবাইকে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নাজমুল নামে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী লজ্জায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ঘটনা জানাজানি হয়।

এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করলে মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন তার দায়িত্বে থাকা তিনটি পদ (সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য) থেকে স্থায়ীভাবে পদত্যাগ করেন। কিন্তু তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদ থেকেই স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিতে আমরণ অনশনসহ আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন শিক্ষার্থীরা।

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর/জেএস