আজ ১২ অক্টোবর, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) দিবস। নানা সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উত্তর জনপদের অন্যতম বিদ্যাপীঠ এখন চতুর্দশ বছরে পদার্পণ করছে। ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।

শুরুতে ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষক নিয়ে রংপুর শহরের ধাপ লালকুঠি এলাকায় টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (টিটিসি) অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। সময় স্বল্পতার কারণে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ না করে কারমাইকেল কলেজের ৭৫ একর জমি নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। রংপুর শহরের পার্কের মোড়ে এর অবস্থান। সেখানে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে।

নিজস্ব এ ক্যাম্পাসে বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২১টি বিভাগে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলছে। নতুন করে চলতি শিক্ষাবর্ষে নতুন আরও একটি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। এ ছাড়া উচ্চতর গবেষণার জন্য রয়েছে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। মোট শিক্ষক রয়েছেন ১৮১ জন। শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় সাড়ে আট হাজার। নির্মাণাধীন একটি ছাত্রী হলসহ মোট চারটি আবাসিক হল, প্রশাসন ভবন, চারটি একাডেমিক ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, মসজিদ, ক্যাফেটেরিয়া ভবনসহ আবাসিক স্থাপনা রয়েছে।

চলতি বছরের ১৪ জুন পঞ্চম উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ যোগদানের পর এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। উপাচার্যের দূরদর্শী দিক-নির্দেশনায় ইতোমধ্যে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ ও দ্রত সময়ে ফলাফল প্রকাশে নজির সৃষ্টি করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে। বিভিন্ন সরকারের আমলে বার বার রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা থাকলেও বাস্তবতার ভূমিতে উপনীত হতে পারেনি স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে দেশের ৩০তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ পর্যায়ে আসতে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যদিয়ে পার হয়েছে ১৩ বছর। এ দীর্ঘ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা নিয়ে অনেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে অবদান রেখেছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, অস্থিরতা, সংঘর্ষ সত্ত্বেও থেমে নেই বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্জন। শুভ্রতা ছড়ানো কাশফুল, কৃষ্ণচূড়া, বকুল শোভিত পথ, লাল অবয়বের ভবন প্রকৃতির এ অপার সৌন্দর্যের মাঝে ভিন্ন স্বকীয়তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গবেষণায় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকলেও ১৩ বছরের পথচলায় শিক্ষা ও গবেষণা খাতে অসামান্য মেধার প্রমাণ রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে কর্মসূচি

দিবসটি উদযাপনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হবে। পরে মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, ভার্চুয়াল আলোচনা সভা এবং জোহর নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি