জাবির হলে থাকতে পারবে না ভর্তিচ্ছুরা, দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা
করোনা সংক্রমণ রোধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন আবাসিক হলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে আবাসন অনিশ্চয়তায় ভোগান্তিতে পড়েছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা
এদিকে শিফট ভিত্তিক পরীক্ষা এবং ইউনিটের সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতি শিক্ষার্থীর পরীক্ষার জন্য অন্তত পাঁচ থেকে সাত দিন সময় প্রয়োজন। এ নিয়ে আবাসনের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ১ হাজার ৮৮৯টি আসনের বিপরীতে তিন লাখ আট হাজার ৬০৬ জন ভর্তিচ্ছু আবেদন করেছে। তার বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী সাভার, আশুলিয়া ও নবীনগরে শিক্ষার্থীদের থাকার উপযুক্ত পাঁচ থেকে সাতটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেলগুলোতে ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০টি রুম রয়েছে। সে হিসেবে সর্বোচ্চ সাতটি হোটেল ও ৭০টি রুম ধরেও মোট ৪৯০টি রুম ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের থাকার উপযুক্ত।
এ ছাড়া এই মুহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় বাসা ভাড়া পাওয়াটাও কষ্টসাধ্য। ফলে আবাসন নিশ্চিতে বিপাকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। তবে আবাসন নিশ্চিত হলেও আর্থিক ক্ষতি হবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে ভর্তি পরীক্ষার ইউনিটের সংখ্যা বেশি ও একই ইউনিটের পরীক্ষা একাধিক শিফটে নেওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে পাঁচ থেকে সাত দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে হবে।
এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী অনন্যা কামাল অর্ণা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক ইউনিটে পরীক্ষা দিব। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত আট থেকে নয় দিন থাকতে হবে। এবার যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকতে দিবে না, তাই আবাসন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে পরিচিতদের কাছে থাকতে পারলে ভালো হতো। অন্যদিকে বাইরে থাকাটা বিশেষ করে আমাদের মেয়েদের জন্য অনিরাপদ। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের উচিত ছিল, অন্তত মেয়েদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলে রাখার ব্যবস্থা করা।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদেরকে আবাসিক হলে স্থান না দেওয়া এবং বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করায় অন্তত ৩ লাখ শিক্ষার্থী নিশ্চিতভাবেই ভোগান্তিতে পড়বে বলে মন্তব্য করছে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিবুল রনি বলেন, ক্যাম্পাসের অংশীজনদের করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে প্রকৃতপক্ষেই আগ্রহী হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে ক্যাম্পাসে ভর্তিচ্ছুদের আগমন কমাতে পারত। এতে যেমন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ভোগান্তি কমত, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনদের সংক্রমণের আশঙ্কাও হ্রাস পেত।
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এবার ভর্তিচ্ছুদের হলে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেহেতু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে আবাসনের ব্যবস্থা করা কষ্টকর। তাই ১০ থেকে ১২ দিন আগেই ভর্তিচ্ছুদের জানিয়ে দিয়েছি। যাতে তারা ঢাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাসা কিংবা আবাসিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করতে পারে।
এর আগে, গত ২৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী ৭ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী অথবা তাদের আত্মীয়-স্বজন অথবা বহিরাগত কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলে অবস্থান করতে পারবেন না।
মো. আলকামা/আরআই