ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টার দা সূর্যসেন হলের দুই শিক্ষার্থীকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে হল থেকে বের হয়ে না গেলে তাদের হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।

রোববার (৭ নভেম্বর) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম। তিনি ওই হলের হল সংসদের সাবেক সদস্যও ছিলেন। আরেক জন তরিকুল ইসলাম। তিনি থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

অভিযুক্তরা হলেন, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত উল্লাহ সিফাত ও আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের অধীনে ইংলিশ ফর স্পিকারস অব আদার ল্যাঙুয়েজেস বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান অর্পণ। তারা দুই জনই সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ইমরান সাগরের অনুসারী। ইমরান ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে।

এর আগে ২০১৮ সালে অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিলো।

জানা যায়, রোববার দিবাগত রাত ২টা ৪৫ মিনিটে দুই শিক্ষার্থীকে সূর্যসেন হলের ৩৫১ নম্বর রুমে ডেকে নেন সিফাত ও অর্পণ। পরে সেখানে থাকা আরও চারজন মিলে ভোর সাড়ে চারটা পর্যন্ত তাদের ওপর নির্যাতন চালান। নির্যাতনের এক পর্যায়ে ‘হল থেকে বের না হয়ে গেলে তোদেরকে মেরে হলের ট্যাংকের ওপরে ফালাই রাখমু’ বলে হুমকি দেন অভিযুক্তরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ২.৪০ এর দিকে সিফাত উল্লাহ ও মাহমুদ অর্পণ আমাকে ও আমার রুমমেট তরিকুল ইসলামকে তাদের কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর তারা আমাদের বেয়াদবি ও প্রোগ্রামে অনিয়মিত হওয়ার অভিযোগ তুলে রড স্ট্যাম্প নিয়ে তেড়ে আসে এবং হত্যার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে আমার এবং তরিকুলের গলা চেপে ধরে। আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকায় আমি অসুস্থ হয়ে সেখানেই শুয়ে পড়ি। পরে আমাদের ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। দেড় ঘণ্টা পরে সকাল চারটা নাগাত আমাদের ওই রুম থেকে বের করে দেয় এবং আজ দুপুরের মধ্যে হল ছেড়ে চলে যাওয়া হুমকি দেয়।

জীবনের শঙ্কা বোধ করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, হল থেকে বের হয়ে না গেলে মেরে ট্যাংকির ওপর ফেলে রাখবে বলে সিফাত উল্লাহ হুমকি দেয়। সেই থেকে আমরা হলের বাইরে অবস্থান করছি। এ নির্যাতনের নির্দেশ দেন ইমরান সাগর। আজ আমরা দুই জন থাকায় হয়ত বেঁচে ফিরতে পেরেছি। না হয় আবরার ফাহাদ হত্যার মতো ঘটনা ঘটতো।

আরেক ভুক্তভোগী তরিকুল ইসলাম বলেন, রাতে আমাদের ডেকে সিফাত এবং অর্পণ অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। এর আগেও আমাকে সে রুম থেকে বের করে দিতে চেয়েছিল। আমাকে রড দিয়ে মারতে আসে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে একজন রড ধরে ফেলে কিন্তু সিফাত আমাকে দেয়ালের ওপর সজোরে আঘাত করে। এতে আমার পায়ে এবং মাথায় মারাত্মক আঘাত লাগে। তারপর জোড় করে আমার ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং অনেকক্ষণ ধরে আমার মোবাইল চেক করে। এরপর সিফাত আমাদের বলে ‘তোদের মেরে হলের ট্যাংকিতে ফেলে রাখলেও আমাদের কেউ কিছু করতে পারবে না।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সিফাত এবং অর্পণকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন ও ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও পাওয়া যায়নি।

তবে এ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের কমিটিতে পদপ্রত্যাশী ইমরান সাগর। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমি এ ঘটনাটা জানতামই না। নির্দেশ দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। সকালে বিষয়টি জেনেছি। জানার পর দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছি। যদি ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে হল প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছি।

সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মকবুল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এই ঘটনায় আমরা দুই পক্ষকে ডেকেছি। তারপর বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি জেনেছি, ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগও দিয়েছে। যেহেতু এটা হলের বিষয়, তাই হল প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। হল প্রশাসন দায়িত্ব নিয়ে বিষয়টি দেখছেন।

এইচআর/এমএইচএস