বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বর্ষে ভর্তি, পরীক্ষার ফরমপূরণ, আবাসিক হলের যেকোনো ধরনের ফি প্রদানে ব্যাংকের লম্বা লাইনই চিরচেনারীতি। এসব ফি প্রদানে এক ব্যাংকে চাপ সামলানো কঠিন হওয়ায় নতুন করে সোনালী ব্যাংকের শাখাও চালু করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এরপরও দীর্ঘসূত্রিতা আর ভোগান্তি কাটছিল না শিক্ষার্থীদের। ভোগান্তি কমাতে এবার এক অ্যাপেই সব বিল প্রদানযোগ্য অনলাইন পেমেন্ট প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ব্যাংকে না গিয়ে ঘরে বসেই প্রদান করা যাবে পরীক্ষার ফরমপূরণ, ভর্তি আর আবাসিক হলের সব ধরনের ফি।

এমন সুবিধা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ‘সোনালী ই-সেবা’ নামের অ্যাপ ব্যবহার করে দেওয়া যাবে সব। ইতোমধ্যে বুয়েটে হলসহ বিভাগ আর একাডেমিক সব ধরনের ফি প্রদান সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আর আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রমে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকও আগ্রহ প্রকাশ করেছে পেমেন্ট অটোমেশনে যেতে।

সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় ফি পরিশোধ সুবিধা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি বুয়েটে পুরোপুরি অনলাইন পরিশোধ সুবিধা দেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। 

আর শিক্ষাবোর্ডসহ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সেবা দিচ্ছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় প্রশাসনের সাথে। পাঠানো হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনাও।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকবছর ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষে ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্রিক প্রাথমিক আবেদন, ফরম ক্রয়, ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সব ফি অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতিতে চলছিল। এরমধ্যে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও পরবর্তী বর্ষে ভর্তি ফি পরিশোধে অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করার সুযোগ করে দেয় প্রশাসন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরিকল্পনা একাডেমিক, বিভাগ আর হল সব ধরনের ফি অনলাইন পেমেন্ট প্রক্রিয়ার নিয়ে আসা। কিন্তু বিপত্তি বাধে হলের আবাসিকতা, সিট ভাড়া, বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন ফি আদায় নিয়ে। যা এতদিন ব্যাংক আর হলে আলাদাভাবে আদায় করা হচ্ছিল। এক অ্যাপে এক ট্যাপেই সব কিছু সংযুক্ত করে একটা সমন্বিত  অনলাইন সিস্টেম উন্নয়ন করতে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি সেন্টারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সম্পর্কিত বিষয়গুলো দেখভাল করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি সেন্টার। এর পরিচালক অধ্যাপক বাবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, এরমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ আবাসিক হলের প্রভোস্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন তিনি। সেখানে প্রভোস্টদের একটা চেকলিস্ট দেওয়া হয়েছে কোন কোন খাতে তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নেন। কোনো খাত সেখানে বাদ পড়ছে কি না তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেয়া হয় তাদের।

ইতিমধ্যে তারা সে চেকলিস্ট জমা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা নিয়ে কিছুটা ব্যস্ততা থাকায় কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছিল অটোমেশনের কাজ। সেটি শেষ হলেই দ্রুত শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করে দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের বলে জানান তিনি।

এদিকে প্রস্তুতিতে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক। তারাও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেছে বিষয়টি নিয়ে। পাশাপাশি চলছে ব্যাংকের আইটি বিভাগের প্রস্তুতি। ব্যাংকটির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্পোরেট শাখার ব্যবস্থাপক বজলুল হুদার সঙ্গে কথা হয় এ বিষয়ে।

তিনি জানান, আমরাও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের আইটি বিভাগও কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে আমরা হয়তো পুরোপুরি অটোমেশনে যেতে পারব না। মাস দুয়েক হয়তো সেমি-অটোমেটশন প্রক্রিয়ায় (কিছুটা সশরীর) চালিয়ে নিতে হবে। এরপর পুরোপুরি অনলাইনে চলবে।

কীভাবে করা যাবে ফি প্রদান? 

অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি ফি প্রদানের সুবিধা দিতে এগিয়ে আছে সোনালী ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির 'সোনালী ই-সেবা' অ্যাপ ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করতে পারবে। এরজন্য প্লে স্টোর বা অ্যাপলের অ্যাপস্টোর থেকে সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করতে হবে। অ্যাপ খুলে কয়েকটি অপশন থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফি নামে অপশনটি ক্লিক করতে হবে। এরপর  শিক্ষার্থীর স্টুডেন্ট আইডি, ফি এর ধরন এবং মোবাইল নম্বর দিতে হবে।

সবকিছু ঠিক থাকলে শিক্ষার্থীকে কত টাকা পরিশোধ করতে হবে তা নির্দেশ করবে সেখানেই। এরপরের ধাপে শিক্ষার্থীকে সব তথ্য সঠিক কিনা নিশ্চিত করতে হবে। পরের ধাপে শিক্ষার্থীকে তার পেমেন্ট গেটওয়ে নির্বাচন করতে হবে। সেখানে সোনালী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, যেকোনো ব্যাংকের মাস্টার/ভিসা/এমেক্স /নেক্সাস বা অন্যান্য কার্ড, অথবা মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতিতে বিকাশ, রকেট বা ইউক্যাশে ফি পরিশোধ করা যাবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও শেখ রাসেল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের সব ফি অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতিতে আনতে কাজ করছে সোনালী ব্যাংক। এ মাসের শুরু দিকে প্রতিষ্ঠান দুটির অধ্যক্ষদের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটি। শুরু হয়েছে প্রাথমিক আলোচনাও।

এমএসআর