খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত ও বিচারের দাবিতে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছে শিক্ষকরা। একই সঙ্গে কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৫ দফা দাবিতে শিক্ষক সমিতি অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন তারা। এদিকে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপাচার্য।

বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশনিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতির সকল সদস্যরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দূর্বার বাংলা’র পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আজ সকালে ক্লাস বর্জন করে কালো ব্যাজ পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হন শিক্ষক সমিতির সদস্যরা। অধ্যাপক ডক্টর সেলিম হোসেনের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কারসহ ৫ দফা দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। পাশাপাশি ক্লাসসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, অনতিবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছেন। শিক্ষক সমিতির গৃহীত যে কোনো কর্মসূচির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি প্রসাশনিক কার্যক্রমও বর্জন করবেন।

নিহত ড. মো. সেলিম হোসেনের পরিবারকে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য ন্যায্য অর্থনৈতিক সুবিধাসহ অতিরিক্ত ১ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস- চ্যান্সেলর, শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসি বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করা হবে। আইনি বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষক নেতারা বলেন, ৩০ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন মারা যান। তিনি লালন শাহ ছাত্রহলের প্রভোস্ট ছিলেন। হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে তবে মৃত্যুর আগে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন ওই শিক্ষক। লালন শাহ ছাত্রহলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠে ছাত্র সংগঠনের কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। তারা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিত তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য।

এদিকে, সিসি ক্যামেরায় দেখা গেলেও, ঘটনার মঙ্গে জড়িক থাকার কথা অস্বীকার করেছেন কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সিজান।

কুয়েট ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিহত শিক্ষক সেলিম হোসেনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ময়না তদন্ত ও মামলা করতে রাজি হয়নি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর সেলিম হোসেনের সঙ্গে ছাত্রলীগের কয়েকজন খারাপ ব্যবহার করেন। এমনকি তাকে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। পরে বাসায় ফিরে বুকে ব্যথ্যা অনুভব করেন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।

মোহাম্মদ মিলন/আরআই