প্রফেসর কল্যান কুমার হালদার ও প্রফেসর মো. হাবিবুর রহমান

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) হল প্রভোস্টের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন দুই শিক্ষক। ইতোমধ্যে উপাচার্যের কাছে তারা তাদের পদত্যাগ পত্র জমাও দিয়েছেন।

পদত্যাগ করা প্রভোস্টরা হলেন- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর কল্যাণ কুমার হালদার ও ফজলুল হক হলের প্রভোস্ট প্রফেসর মো. হাবিবুর রহমান। 

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রফেসর কল্যাণ কুমার হালদার পদত্যাগের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।  

এদিকে কুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষকরা আতঙ্কে রয়েছেন। কেউ হল প্রভোস্টের দায়িত্ব নিতে চাইছেন না।

পদত্যাগ করা দুই প্রভোস্ট জানান, ড. সেলিমের মৃত্যুর পর থেকে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্তের পাশাপাশি জীবন নিয়েও শঙ্কা করছেন। হলের পরিবেশও সুষ্ঠু নয়। তাছাড়া পরিবারের সদস্যরাও ঘটনার পর থেকে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। অপর চার হলের প্রভোস্ট ও সাত হলের সহকারী প্রভোস্টরা ৫ দফা দাবি পূরণ না হলে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছেন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর কল্যান কুমার হালদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ড. সেলিম আমার বন্ধু ছিল। তার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার মৃত্যুর পরের দিনই আমি প্রভোস্ট পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। এরপর আরও একজন প্রভোস্ট পদত্যাগ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, কুয়েটের সাতটি হল পরিচালনা নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। হলের ডাইনিং ম্যানেজার নিয়োগ, খেলাধুলা, ফ্লোর মনিটরিং ও ইন্টারনেটসহ আরও কিছু বিষয় থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি হলের সিট বরাদ্দ নিয়ে সংগঠনটির মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। এ নিয়ে প্রভোস্টদের মানসিক চাপে রাখা হয়, যার শিকার সেলিম হোসেন। 

প্রভোস্টরা জানান, তাদের পদত্যাগ সহকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুরই প্রতিবাদ। তারা শিক্ষক সমিতির দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ৫ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম দেন। কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ, প্রভোস্টদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগসহ বিভিন্ন দাবি তোলেন তারা।

কুয়েটের রোকেয়া হলের প্রভোস্ট প্রফেসর এবিএম মামুন জামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষক সেলিম হোসেন সুস্থ ছিলেন। তার চলে যাওয়া কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। তার মৃত্যুতে আমরা সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার মৃত্যুর পর প্রভোস্ট এবং সহকারী প্রভোস্টদের নিয়ে সভা হয়েছে। সেখানে সবাই শিক্ষক সমিতির ৫ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে দুইজন প্রভোস্ট পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যরা সাত দিনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছেন। ইতোমধ্যে ৯ জন ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। এছাড়া ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, প্রভোস্টদের বেঁধে দেওয়া সময় সাত দিন আজ শেষ হচ্ছে। এখন আবারও সভা করার কথা রয়েছে। সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

কুয়েটের সাতটি হলের মধ্যে ড. মো. সেলিম হোসেন লালন শাহ হলের প্রভোস্টের দায়িত্বে ছিলেন। আর দুটি হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করেছেন।

কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালক অধ্যপক ইসমাঈল সাইফুল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুধবার (১ ডিসেম্বর) প্রভোস্টদের বিষয়ে সভা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। যা রেজুলেশন আকারে তৈরির প্রস্তুতি চলছে। সভায় দু-একজন প্রভোস্ট পদত্যাগের বিষয় তুললে তাদের জানানো হয়- কেউ পদত্যাগ করতে চাইলে ব্যক্তিগতভাবে জমা দিতে পারেন। শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চলছে। 

এদিকে ড. সেলিম হোসেনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তোলার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষক ড. সেলিমের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কবর থেকে তোলার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া কুয়েটের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।

খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুয়েট শিক্ষকের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলনের আবেদন করেছিল খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। মরদেহ যেহেতু কুষ্টিয়াতে দাফন হয়েছে, সেকারণে খুলনা থেকে আবেদনটি কুষ্টিয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত ১ ডিসেম্বর ময়নাতদন্ত ছাড়াই ড. সেলিমের মরদেহ কুষ্টিয়ার বাঁশখালী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর