পারভেজের পিঠে ও গালে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ছবি- ঢাকা পোস্ট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে এক অস্থায়ী শিশু দোকানিকে রড-স্ট্যাম্প ও লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগকর্মীদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে হলের টিনশেডের ১৮ নং রুমে এই ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে এই নির্যাতন। নির্যাতনের শিকার দোকানির নাম পারভেজ হোসেন (১৭)।

সে ওই হলের ক্যান্টিনের পাশে ভাজাপোড়া বিক্রি করে। তার মামা এই হলের ক্যান্টিনে কাজ করতেন, যিনি গত বছর মারা যান। ছোটবেলায় বাবাকে হারান পারভেজ। ফলে ১৪ বছর বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। 

ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানায়, অভিযুক্ত আরিফের শার্ট কয়েকদিন আগে হারিয়ে যায়। পরে শার্টটি ডাস্টবিনে পায় ক্যান্টিন বালক পারভেজ। সে শার্টটি পরিষ্কার করে ব্যবহার করে। এ কারণে তাকে চোর আখ্যা দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করে আরিফ ও তূর্যসহ অনেকে। পারভেজ মারাত্মকভাবে আহত হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার পিঠে ও গালে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

অভিযুক্ত আরিফ হোসাইন ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং সাদিক তুর্য তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা ছাত্রলীগের হল কমিটির পদপ্রত্যাশী রুবেল ও হাফিজের অনুসারী। রুবেল এবং হাফিজ উভয়ই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী। নির্যাতনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ ছাত্রই এই গ্রুপের বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

ভুক্তভোগী পারভেজ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলে, যার শার্ট তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে যান, তারপর আমাকে গালিগালাজ করেন। পরে ওখানে ২০-৩০ জন এসে আমাকে চোর বলে রড-স্ট্যাম্প দিয়ে মারেন এবং থাপ্পড় ও লাথি দিতে থাকেন। চারজন আমার হাত ও পা ধরে রাখেন। আমি তাদের বারবার বলেছিলাম আমি শার্ট চুরি করিনি, ডাস্টবিনে পেয়ে পরার জন্য নিয়েছিলাম।

কাউকে চিনতে পারছে কি না জানতে চাইলে সে বলে, দেখলে আমি চিনব তাদের। আমি এই ঘটনার বিচার চাই। আমি কিছু চুরি করিনি। আমার সারা শরীর ব্যথা, হাঁটতে পারছি না।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আরিফ হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিছুদিন আগে আমি নতুন শার্ট শুকাতে দিয়েছিলাম, পরে আর পাইনি। গতকাল (মঙ্গলবার) দেখলাম পারভেজ নামের এই ছেলেটা পরে আছে। তারপর তাকে আমার রুমে ডাকলাম এবং আমার ইমিডিয়েট সিনিয়রদের ডাকলাম। তারা আবার তাদের ইমিডিয়েটকে ডাকল। শার্ট ছাড়াও আমাদের কয়েকটি রুম থেকে আরও অনেকের মানিব্যাগ, মোবাইল চুরি হয়েছে। তাই সবাই মিলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আর এই ছেলেটা আসলেই চোর।

মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে তেমন মারধর করা হয়নি, সামান্য চড়-থাপ্পড় দেওয়া হয়েছে। এ সময় কারা কারা ছিল তাদের নাম-পরিচয় প্ৰকাশ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন আরিফ। তবে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের প্রায় ৫০ জন ছিল বলে তিনি জানান। 

আরেক অভিযুক্ত সাদিক তূর্যকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী রুবেল ও হাফিজের দাবি, এখানে যারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করে সব গ্রুপের লোক আছে। তাদের প্রতি একটা ‘ব্লেম গেম’ খেলা হচ্ছে।

হাফিজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি গণরুমের ওদের শার্ট রোদে দেওয়া ছিল, সেটা না বলে নিয়ে গেছে। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য রুমে ডাকছে। তারপর কথাবার্তা হয়েছে, যা হয়েছে- তারা ছোট মানুষ, ভুল বুঝাবুঝি হয়ে গেছে। আমি তাদের বলে দিয়েছি এগুলো করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, গণরুমে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন সব গ্রুপের লোকই থাকে। আমাদের উপর অভিযোগ দিয়ে কেউ হয়ত ব্লেম গেম খেলছে, এটা ঠিক না।

আরেক পদ-প্রত্যাশী রুবেল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যারা তথ্য দিয়েছে তারা ভুল তথ্য দিয়েছে। সে (আরিফ) আমার অনুসারী না। সে রাজনীতিও করে না। 

এইচআর/এইচকে