অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতোই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অনেকদিন বন্ধ ছিল দেশের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজ। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলে দীর্ঘ ছুটির পর আবারও শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে অনেকেই আর ফেরেননি প্রাণের ক্যাম্পাসে। বছর জুড়েই ঢাকা কলেজের সঙ্গী ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু। অকালে ঝড়ে পড়েছেন একজন শিক্ষক ও পাঁচজন শিক্ষার্থী।

চলতি বছরের ১৩ জুন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়।

শাহাদাত হোসেন ঢাকা কলেজের ইংরেজির বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বিসিএস ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন। করোনার কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সদা হাস্যজ্জল এবং শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষক শাহাদাত হোসেন দেখে যেতে পারেননি মুখরিত ক্যাম্পাস। আর ফিরতে পারেননি প্রিয় শিক্ষার্থীদের কাছে।

২৬ মে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান টিপু সুলতান রনি (২২)  নামের এক শিক্ষার্থী। রনি ঢাকা কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষ (২০১৬-১৭ সেশনের) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা আব্দুর রহিম জানান, বন্ধুদের সঙ্গে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয় রনি। তখন হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মারাত্মকভাবে দুর্ঘটনায় শিকার হয়। এরপর তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রনি মারা যান।

গত ১৪ জুলাই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ। তিনি কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় অসাবধানতাবশত ইন্টারনেটের তারে হাত দিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান তিনি। আব্দুল্লাহ ঢাকা কলেজের দক্ষিণায়ন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।

চলতি বছর ব্লাড ক্যানসারের কাছে হেরে যান ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান। ২ আগস্ট সকালে রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী।

আশিক ক্যানসারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি নিয়েছিলেন। এতে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও হঠাৎ ১ আগস্ট রাতে তিনি স্ট্রোক করেন। এরপর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আশিকুর রাজধানীর সাইনবোর্ডের সানারপাড় এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলায়।

৮ নভেম্বর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল খিদরী। কুমিল্লার লালমাই এলাকায় নিজ বাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান খিদরী। তিনি ঢাকা কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন। ঘরের একটি বৈদ্যুতিক খোলা হাত দিয়ে সরাতে গিয়ে নিজেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হোন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

সবশেষ ২৩ ডিসেম্বর সকালে আত্মহত্যা করেন ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী মারুফ ভূঁইয়া। তিনি কলেজের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গাজীপুরের কালীগঞ্জে নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন তিনি।

আরএইচটি