খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর ঘটনায় সাত ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেও শোকজ করা ৪৪ ছাত্রের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি। 

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় শুরু হওয়া সভা সিদ্ধান্ত ছাড়াই আগামীকাল বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

কুয়েটের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ইসমাঈল সাইফুল্লাহ বিকেল সাড়ে ৫টায় সাংবাদিকদের একথা জানান।

তিনি জানান, শোকজ পাওয়া ৪৪ ছাত্রের জবাব পর্যালোচনা, জবাব সন্তোসজনক না হলে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে সে বিষয়ে শৃঙ্খলা কমিটির ১১ সদস্য চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারায় সভা মুলতবি করা হয়েছে।

প্রফেসর সাইফুল্লাহ ইসমাইল আরও জানান, ৪৪ ছাত্রের অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে কারোরই সর্বোচ্চ শাস্তি স্থায়ী ও সাময়িক বহিষ্কার হতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তাকে দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। আগামীকালের শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে সিদ্ধান্ত বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।

কুয়েটের জনসংযোগ ও তথ্য শাখার মুখপাত্র রবিউল ইসলাম সোহাগ জানান, বুধবার বেলা ১১টায় কুয়েট সিন্ডিকেটের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ছাত্রদের বিষয়ে সিন্ডিকেটের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। 

কুয়েট সূত্রে জানা যায়, প্রফেসর সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ৩০ ডিসেম্বর ৪৪ ছাত্রকে শোকজ করে। গত ৩ জানুয়ারির মধ্যে ৪৪ ছাত্র শোকজের জবাব দেয়।

কুয়েটের শিক্ষকদের অভিযোগ, কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার মনোনীত ছাত্রকে লালন শাহ হলের ডাইনিং ম্যানেজার নিযুক্ত করার জন্য হলের প্রভোস্ট ড. সেলিমকে চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। গত ৩০ নভেম্বর সেজান নেতাকর্মীদের নিয়ে আবারও ড. সেলিমকে চাপ প্রয়োগ এবং তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে বাসায় গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে ড. সেলিমের মৃত্যু হয়। এ ঘটনা তদন্তে দুই দফায় কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ড. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে ২ ডিসেম্বর দুপুরে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষকরা।
 
ড. সেলিমের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর ঘটনায় ৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। নতুন করে গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়। কিন্তু কমিটি ওই সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি। গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ৫ কর্মদিবসে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ৭ জানুয়ারি খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে ৯ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২৮ ডিসেম্বর তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন কমিটির সদস্যরা।

এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েট বন্ধের মেয়াদ ১০ দিন বাড়িয়ে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছিল। 

মোহাম্মদ মিলন/আরআই