কুয়েটে ক্লাস শুরু রোববার
শিক্ষকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় বন্ধ থাকা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) হল ৩৫ দিন পর খুলেছে আজ। শুক্রবার (০৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হয়। তবে রোববার থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হবে।
কুয়েটের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ইসমাঈল সাইফুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গত ৩ ডিসেম্বর থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কুয়েটের হল বন্ধ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮তম জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ সকালে হল খুলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা তাদের মেনে চলতে হবে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে কুয়েটের জনসংযোগ ও তথ্য শাখার মুখপাত্র রবিউল ইসলাম সোহাগের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভা অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহ খুলে দেওয়া হয়েছে। রোববার থেকে একাডেমিক সব কার্যক্রম শুরু হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কিছু নির্দেশনা দৃঢ়ভাবে মেনে চলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনাগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা বিধির ১২, ১৩, ১৪, ১৬, ১৭ ও ১৮ ধারাসমূহ এবং আবাসিক হলের নিয়মাবলী দৃঢ়ভাবে মেনে চলতে হবে। ছাত্র শৃঙ্খলা বিধির ১২ ধারা মোতাবেক পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) এর পূর্বানুমোদন ছাড়া শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার মিছিল, সভা-সমাবেশসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারসহ একাডেমিক এরিয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বহির্ভূত কোনো প্রকার ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার টাঙানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কুয়েটের আবাসিক হলের নিয়মাবলীর ৩(প) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ব্যাচ বা তার পূর্ববর্তী ব্যাচসমূহের আবাসিক হলে বসবাসরত স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
এর আগে কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ২ ও ৩ ডিসেম্বরের সিন্ডিকেট সভায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুয়েট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ৩ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ পেয়ে কুয়েটের ৭টি হলে থাকা শিক্ষার্থীরা হল ছাড়েন।পরবর্তীতে ২৩ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটের সভা শেষে ৭ জানুয়ারি হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ নভেম্বর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. সেলিম হোসেন ক্যাম্পাসের কাছের ভাড়া বাসায় মারা যান। শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুর পর অভিযোগ ওঠে মৃত্যুর দিন দুপুরে বাসায় ফেরার পথে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অধ্যাপক সেলিমকে বিভাগে তার কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তার ওপর মানসিক নিপীড়ন চালানো হয়।
এছাড়া কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ কয়েকজন ছাত্র তাদের মনোনীত প্রার্থীকে ডাইনিং ম্যানেজার করার জন্য হল সেলিম হোসেনকে নিয়মিত চাপ দিয়ে আসছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলছে, এটি হত্যাকাণ্ড। অধ্যাপক সেলিমের পরিবারও এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছে।
ওই শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল ছুটি ঘোষণা করা হয়। সেই ছুটি দুই দফা বাড়িয়ে ৭ জানুয়ারি হল এবং ৯ জানুয়ারি ক্লাস শুরুর ঘোষণা দেয় প্রশাসন।
সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বৃহস্পতিবার (০৬ জানুয়ারি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষকেরা।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েট ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান, হাসান আব্দুল কাইয়ুম, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান রাজ্জাক ও রিয়াজ খান নিলয়কে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটি। এছাড়া আরও ৪০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৬ জানুয়ারি) দুপুরে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভায় কুয়েট শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমসহ দায়-দায়িত্ব পালন করবে। আইনি বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করতে হবে।
মোহাম্মদ মিলন/এসপি