বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসের একাধিক স্থানে বহিরাগতদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব কার্যকলাপে ‌বিব্রত শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তাদের দ্বারা ক্যাম্পাসের অনেকে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়, বৈশাখী চত্বর, আমবাগান, আমতলা, লিচুবাগান, জব্বার রেললাইন ও প্লাটফর্মসংলগ্ন বিভিন্ন জায়গায় বহিরাগতদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এরমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ঘেঁষে স্থাপিত বিভিন্ন বসার জায়গার পাশে মিলছে যৌন মিলনসামগ্রী।

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিয়ম লঙ্ঘন করে বিশেষ করে ছবি তোলার জন্য শহীদ মিনার, মরণ সাগরের উপরে জুতা পায়ে ওঠা, রেললাইনের প্লাটফর্ম, মুক্তমঞ্চের সামনে, আমচত্বর, টিএসসি লেক, বৈশাখী চত্বর এলাকায় অনেক ছেলেমেয়েদের অশালীনভাবে চলাফেরা ও কর্মকাণ্ড করতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীসহ মোট ৯ হাজার ৮০০ জন ক্যাম্পাসে বসবাস করছেন। এছাড়া প্রতিদিন যোগ হয় গড়ে ২ শতাধিক দর্শনার্থী। অন্যদিকে ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে শহর থেকে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার প্রধান সড়ক হওয়ায় দিন-রাত দ্রুতগতিতে চলাচল করে ভারী ও মাঝারি যানবহন।

এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে বাকৃবি নিরাপত্তা শাখা। কিন্তু বর্তমানে নিরাপত্তা শাখায় মাত্র ১১৪ জন নিরাপত্তা কর্মী রয়েছেন। যা ১২০০ একরের এই বিশাল ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ঠ নয়। এ কারণেই বিভিন্ন সময় বহিরাগতদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের সাথে ঘটছে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা।

সম্প্রতি বাকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থী ফারহানা জান্নাত ইমু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন, নিজের ক্যাম্পাসে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? বোরকা পরা ৪ জন মেয়ে ঘুরতে বের হয় টিএসসি লেকভিউতে। এরপর কিছু বখাটে তাদের উদ্দেশ্য করে যৌন হয়রানি, মেয়েদের ছবি তোলাসহ বিভিন্নভাবে তাদের উত্ত্যক্ত করতে থাকে। ঘটনাটি সন্ধ্যায় হয়। 

এছাড়া ২ ডিসেম্বর সাড়ে ৬টায় নেসক্যাফে চত্বরে থেকে দুটো মেয়ের পিছু নেয় তিনজন মোটরসাইকেল আরোহী। এরপর তারা প্রক্টর অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে এই মেয়েদেরকে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করে এবং বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে। মেয়ে দুটো ভয়ে দৌড়ানোর সময়ও তারা তাদের পিছু নেয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, বহিরাগতরা মেয়েদের দেখে মোটরসাইকেলের গতি বাড়িয়ে বাইক স্ট্যান্ড করে। যা বিপদজ্জনক এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে। এছাড়া তারা বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। এসব অসামাজিক কর্মকাণ্ডের ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খুবই লজ্জাজনক। কিন্তু প্রশাসন এখনো এ বিষয়ে কিছু ব্যবস্থা নেয়নি।

বাকৃবির প্রধান নিরাপত্তা অফিসার মহিউদ্দীন হাওলাদার বলেন, আমাদের নিরাপত্তা কর্মী এখন কিছু কম আছে। করোনার কারণে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ২০ জনকে নতুন নিয়োগের জন্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের নিয়োগ হলে আমরা ক্যাম্পাসকে আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব।

এমএসআর