বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেতর দিয়ে পণ্যবাহী ভারী ট্রাক, পিক-আপ চলাচলের ফলে হর্নের উচ্চ শব্দে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী দেবদারু সড়কসহ একাধিক সড়কে দ্রুত ভাঙনের মুখে পড়ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাই ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে চলাচল করা এসব গাড়ি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড় থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার কংক্রিটের সড়ক রয়েছে। রাস্তাটির মাঝে সড়ক বিভাজনে রয়েছে দেড় শতাধিক দেবদারু গাছ। এই সড়কের পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের দুইটি ভবন। কৃষি অনুষদের চারটি বর্ষ, মার্স্টাস ও অনান্য অনুষদের ক্লাস মিলিয়ে দুই হাজারের অধিক শিক্ষার্থী এই কৃষি অনুষদীয় ভবনে ক্লাস করে থাকেন।

আবার অনুষদের বেশির ভাগ ল্যাব ও শিক্ষকদের অফিস কক্ষও রয়েছে। কিন্তু ভবন-সংলগ্ন সড়কটিতে প্রতিদিন ৩ হাজারের অধিক যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহন চলার সময় তাদের গাড়ির ইঞ্জিন ও হর্নের শব্দে পাঠে মনোযোগী হতে পারেন না বলে তারা জানিয়েছেন। এতে পাঠ কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন।

কৃষি অনুষদের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুরাদ আহমেদ ফারুখ বলেন, বাকৃবি ক্যাম্পাসের শব্দদূষণের ওপর আমরা একটি গবেষণা করেছিলাম সেখানে দেখেছি এখানে শব্দদূষণের মাত্রা অনেক বেশি। যেখানে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবলের বেশি থাকা উচিত নয়; সেখানে বাকৃবি ক্যাম্পাসে ৭২ থেকে ১০৫ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দের মাত্রা রেকর্ড করেছি। আর এই শব্দ দূষণের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠে মনোযোগ হারানো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। গবেষণায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের ওপর সাংঘাতিক রকমের খারাপ প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়েছে বলে জানান এই গবেষক।

বাকৃবির কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ট্রাক চলার সময় শব্দদূষণের জন্য আমরা শিক্ষকের কথা ঠিকমতো শুনতে পারি না। ক্লাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এবং বিশেষ করে কৃষি অনুষদ সংলগ্ন রাস্তায় যানবাহনের চলাচল সীমিতকরণ, উচ্চশব্দের যানবাহন চলাচল বন্ধ এবং গতিসীমা নির্দিষ্ট করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

শুধু তাই নয়, ভারী যান চলাচলে সড়কটিরও বেহাল দশা। রাস্তাজুড়ে ২৫ টিরও অধিক স্থানে ভাঙনসহ রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত এবং কোথাও কোথাও অর্ধফুটেরও বেশি দেবে গেছে। অথচ সড়কটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন স্থাপনার মধ্যে একটি। রাস্তাটি অনেক আগে নির্মিত হলেও দশকের পর দশক এটি অক্ষত ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই সড়কে ট্রাক, ট্রলি, ট্রাক্টরচালিত পণ্যবাহী যানসহ ভারী যান চলাচলের কারণেই রাস্তাটি তার সৌন্দর্য হারানোর পথে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহ শহরের ব্রিজ মোড় থেকে সুতিয়াখালি, গফরগাঁও, পাগলাবাজার, ফসিলের মোড়, শেষ মোড়, বয়রা বাজারের যানগুলো এই সড়কে চলাচল করে থাকে। এদের মধ্যে রয়েছে ট্রাক, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। ক্যাম্পাসের ফসিলের মোড়-শেষ মোড় সড়কটি ৩ বছর ধরে সংস্কারকাজ চলার কারণে এক রকম বাধ্য হয়েই কৃষি অনুষদীয় ভবন-সংলগ্ন সড়কটি ব্যবহার করতে হচ্ছে চালকদের।

সড়কটি নিয়ে বাকৃবি অফিসার পরিষদের সভাপতি খায়রুল আলম নান্নু বলেন, দেবদারু সড়কটি আমাদের প্রাণের সড়ক। শত শত মিছিলের সাক্ষী এই দেবদারু সড়ক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়ে এই রাস্তাটি তৈরি হয়েছিল। এই সড়কটি দিয়ে যেখানে কেবল পথচারী ও হালকা যানবাহন চলার কথা সেখানে এই সড়কটি দিয়ে ১০-১২ টনের অধিক ভারী ট্রাক-লরি, পিকআপ চলছে। এ কারণে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রাকচালক জানায়, ‘আমাদের আসলে কিছু করার নেই। এই সড়কটি ব্যবহার না করতে পারলে শেষ মোড়, সুতিয়াখালি, বয়ড়া, ভালুকা, গফরগাঁয়ে চলাচল করা বন্ধ হয়ে যাবে আমাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে জব্বারের মোড়-শেষ মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি আছে সেটি চালু হলে ক্যাম্পাসের ভেতরের দেবদারু সড়কে আমরা আর গাড়ি চালাব না।’

প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন বলেন, ‘ফসিলের মোড় থেকে শেষ মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কার কার্যক্রম চলায় সড়কটি ব্যবহার করতে হচ্ছে চালকদের। সংস্কার চলমান রাস্তাটি মূলত ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের। আমরা সিটি কর্পোরেশনকে কয়েকবার রাস্তাটির সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার কথা বললেও তারা এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। দ্রুতগতিতে রাস্তাটির সংস্কার করার জন্য আমরা তাদের আবার জানাব। এ রাস্তাটি চলাচললের উপযুক্ত হলে দেবদারু সড়কটি ধ্বংসের কবল থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।

এমএসআর