শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন শিক্ষার্থীরা।  বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে  উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ২৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন শুরু করেছেন। 

এদিকে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক আন্দোলনস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। রাত পৌনে ৯টায় শতাধিক শিক্ষকের একটি দল আন্দোলনস্থলে এসে হাজির হন।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস, সেন্টার অফ এক্সিলেন্সের পরিচালক অধ্যাপক ড. মস্তাবুর রহমান, সোশ্যাল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক দিলারা রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধানসহ শতাধিক শিক্ষককে দেখা গেছে।

শিক্ষকরা আন্দোলনস্থলে উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষকদের কাছে তারা জানতে চান- তাদের এই এক দফা দাবির সঙ্গে শিক্ষকরা একমত কিনা? এ সময় শিক্ষকরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। 

শিক্ষার্থীরা বলেন, যদি আপনারা আমাদের এক দফা দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন তাহলে আমরা আপনাদের সঙ্গে কথা বলব। এছাড়া আপনাদের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি নই।

রাত সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা ধরে শিক্ষকরা সেখানে অবস্থান করছেন। 

এর আগে রাত ৮টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা।

 গত রোববার (১৬ জানুয়ারি) পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনায় দুই থেকে ৩০০ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলার এজাহারে লেখা হয়েছে- আন্দোলনরত ২শ-৩শ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটাানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ে। এছাড়া পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, হলে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে তারা বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রীহলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদকে কল করেন। প্রভোস্টকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘বের হয়ে গেলে যাও, কোথায় যাবে? আমার ঠেকা পড়েনি।’ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘কীসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।’ 

পরে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করেন তারা। এরইমধ্যে রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।  এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। তার আগে বিকেলে তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যকে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে ওই নির্দেশনা অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়।

জুবায়েদুল হক রবিন/আরএআর