ফরিদ উদ্দিন আহমেদ (বাঁয়ে) ও নুরুল হক নুর (ডানে)

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগকেই একমাত্র ও সহজ সমাধান বলে মনে করেন গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। নুর বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যখন শিক্ষার্থীদের পেটানোর জন্য পুলিশ ও তার অনুগত ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার করে, তখন তাকে নৈতিকভাবে কারোরই সমর্থন করা উচিত নয়।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রথমে আন্দোলন করেছিলেন খাবারের মানসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে, পরে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করেন। উপাচার্য এসব বিষয়ের সমাধান না করে তিনি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করিয়েছেন, অনেকে আহত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশন করছেন। উপাচার্য তাদের কাছে যেতে পারলেন না। অনুগত শিক্ষকদের একটি অংশকে তিনি নামিয়ে দিলেন তার পক্ষ নেওয়ার জন্য। এসব খুবই নিম্ন মানের চিন্তাভাবনা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে এসে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী, আবুল ফজল থেকে শুরু করে জ্ঞানীদের উপাচার্য হতে অনুরোধ করেছিলেন- স্মরণ করে নুর বলেন, শিক্ষার্থী ও দেশের বিবেকবানরা আজকের উপাচার্যদের অপসারণ চাইলেও তারা পদত্যাগ করতে চান না। কারণ তারা শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পাণ্ডিত্য দিয়ে উপাচার্য হতে পারেননি। তারা উপাচার্যকে একটি লাভজনক পদ হিসেবে মনে করেছেন। এ কারণে পদ একবার পেয়ে গেলে তা ধরে রাখার জন্য নানা অপ-তৎপরতা করছেন, দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে নিজেদের জড়াচ্ছেন, যা উচিত নয়।

ডাকসুর সাবেক এ ভিপি বলেন, আমি মনে করি, আমাদের ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪টির উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ ও উন্নয়ন প্রকল্পের নানা ধরনের দুর্নীতি অনিয়ম ইউজিসি তদন্ত করছে। বেশ কটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রমাণও পাওয়া গেছে। সবার দাবির পরও এ উপাচার্যের অপসারণে যদি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে সারাদেশের ছাত্রসমাজ ও বিবেকবানদের অসম্মান করা হবে।

সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত রয়েছে- মন্তব্য করে তিনি বলেন, ১৩ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। কেন তাদের প্রতি কর্ণপাত না করে সরকার তাকে প্রশ্রয় দেবে। আমি মনে করি সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আন্দোলনটা আজকের এ পর্যায়ে এসেছে। আন্দোলন শুধুমাত্র শাবিপ্রবিতে সীমাবদ্ধ নেই। সারাদেশের ছাত্র, শিক্ষক ও সচেতন নাগরিকরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তারাও উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে অভিমত ব্যক্ত করছেন।

উপাচার্যের পদত্যাগই সমাধান উল্লেখ করে তিনি বলেন, উপাচার্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক। অভিভাবক যখন অভিভাবক-সুলভ আচরণ করতে না পারেন, ছাত্রদের পেটানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে যান এবং ছাত্রদের আহত করেন, তখন কীভাবে তিনি এ পদে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিটি যৌক্তিক। এটিই একমাত্র ও সহজ সমাধান।

শাবিপ্রবির এ পরিস্থিতিতে ডাকসু নেতৃবৃন্দের কোনো ভূমিকা থাকবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ মানেনি, তারা একটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি না মেনে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হলে, আমরা সংহতি জানিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হব। আমরা আজ সাবেক ডাকসু নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেছি। আমরা মনে করি, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংকটে সাবেক ছাত্রনেতাদের একটি উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

এইচআর/আরএইচ